
প্রতিবেদক: দেশে বহুতল ভবনের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লিফটের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বাজারে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। ২০১৮ সাল থেকে তারা নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে নিজস্ব কারখানায় লিফট তৈরি করছে। ‘প্রপার্টি লিফটস’ ব্র্যান্ড নামে বাজারজাত করা এসব লিফটের বিক্রি গত সাত বছরে প্রায় ছয় গুণ বেড়েছে।
প্রতিবছর দেশে সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার লিফট বিক্রি হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বর্তমানে ২০–২৫ শতাংশ লিফট স্থানীয়ভাবে ওয়ালটন ও প্রাণ-আরএফএল তৈরি করছে। এতে আমদানিনির্ভরতা কিছুটা কমলেও এখনো বড় অংশ বিদেশ থেকে আসছে।
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে লিফট আমদানি করে আসছে প্রাণ-আরএফএল। তবে ২০১৮ সালে তারা নিজস্ব কারখানায় উৎপাদন শুরু করে। এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে প্রপার্টি লিফটসে সাত ধরনের লিফট তৈরি হয়—প্যাসেঞ্জার, কার্গো, হাসপাতাল, হোম, ক্যাপসুল, হাইড্রোলিক ও সিজার লিফট।
লিফট তৈরির কিছু মৌলিক কাঁচামাল যেমন মোটর, দড়ি ও কন্ট্রোলার বিদেশ থেকে আমদানি করা হলেও প্রায় ৮০ শতাংশ যন্ত্রাংশ স্থানীয় কারখানায় তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ৪০ শতাংশের বেশি স্থানীয় মূল্য সংযোজন করছে। কারখানার আয়তন এক লাখ বর্গফুট এবং সেখানে ২১০ জন কর্মী কাজ করছেন। সারাদেশে স্থাপন ও সার্ভিসিংয়ে আরও এক হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
প্রতি মাসে কারখানায় সর্বোচ্চ ২৭০টি লিফট তৈরির সক্ষমতা রয়েছে। তবে বর্তমানে গড়ে ১০০টি লিফট উৎপাদিত হচ্ছে। এ লিফটের দাম ধারণক্ষমতা ও বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে ১৫ লাখ টাকা থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত। দেশে আমদানি করা সমমানের লিফটের তুলনায় স্থানীয় লিফট ৫–৭ লাখ টাকা সাশ্রয়ী।
প্রপার্টি লিফটসে নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রতিটি লিফটে আন্তর্জাতিক মানের বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক সুরক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। যেমন—লিফটের দড়ি ছিঁড়ে গেলে অটো রেসকিউ ডিভাইস (এআরডি) স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ নেয়। এছাড়া বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মোটর ব্যবহার করা হচ্ছে।
২০১৮ সালে মাত্র ৫৫টি লিফট বিক্রি করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। ২০২৪ সালে এসে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২৯টিতে। বর্তমানে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, কোরীয় ইপিজেড, বে অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ সরকারি-বেসরকারি ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে প্রপার্টি লিফট ব্যবহার হচ্ছে।
প্রাণ-আরএফএল শিগগিরই আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের পরিকল্পনা করছে। আগামী বছর থেকে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে রপ্তানি শুরু করার লক্ষ্য রয়েছে। আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল বলেন,স্থানীয়ভাবে মূল্য সংযোজন বাড়াতে পারলে দাম আরও কমে আসবে, ফলে লিফটের ব্যবহার বাড়বে। তবে এ খাতে সরকারের নীতি সহায়তা প্রয়োজন, বিশেষ করে সরকারি প্রকল্পে দেশীয় লিফট ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হলে স্থানীয় কোম্পানির অবস্থান আরও শক্ত হবে।