দেশে দারিদ্র্য বেড়ে পৌনে পাঁচ কোটি মানুষ এখন গরিব

প্রতিবেদক: বিগত তিন বছরে দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি চারজনের একজন দরিদ্র। এছাড়া আরও ১৮ শতাংশ পরিবার এমন আর্থিক ঝুঁকিতে রয়েছে যে কোনো সংকটে তারা গরিব হয়ে যেতে পারে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) সাম্প্রতিক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় করা ইকোনমিক ডায়নামিকস অ্যান্ড মুড অ্যাট হাউসহোল্ড লেভেল ইন মিড ২০২৫’ শীর্ষক গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয় গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এলজিইডি মিলনায়তনে।

গবেষণায় বলা হয়, ২০২২ সালে দেশের দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮.৭ শতাংশ। ২০২৫ সালের মে মাসে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৮ শতাংশে। একই সময়ে অতি দারিদ্র্যের হারও ৫.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯.৩৫ শতাংশ হয়েছে। জনসংখ্যার হিসেবে এখন কমপক্ষে পৌনে পাঁচ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে।

পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান জানান, করোনা মহামারি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা—এই তিন সংকট দারিদ্র্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান জনআশা তৈরি করলেও একই সঙ্গে অনিশ্চয়তাও বাড়িয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, শহরে পরিবারের আয় কমলেও খরচ বেড়েছে। বর্তমানে শহরের একটি পরিবারের গড় মাসিক আয় ৪০ হাজার ৫৭৮ টাকা, ব্যয় ৪৪ হাজার ৯৬১ টাকা। অন্যদিকে গ্রামে আয় কিছুটা বেড়ে এখন গড়ে ২৯ হাজার ২০৫ টাকা, ব্যয় ২৭ হাজার ১৬২ টাকা। জাতীয়ভাবে মাসিক গড় আয় ৩২ হাজার ৬৮৫ টাকা হলেও ব্যয়ের পর সঞ্চয় দাঁড়ায় মাত্র ৭০ টাকা। তবে সবচেয়ে দরিদ্র ১০ শতাংশ পরিবারের আয় মাসে মাত্র ৮ হাজার ৪৭৭ টাকা, যেখানে শীর্ষ ১০ শতাংশের আয় এক লাখ টাকার বেশি। এতে আয়বৈষম্য স্পষ্ট হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়, খাদ্যে খরচ যায় পরিবারের মোট ব্যয়ের প্রায় ৫৫ শতাংশ। শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যয়ও দ্রুত বাড়ছে। অনেক পরিবার সঞ্চয় ভেঙে বা ধারদেনা করে খরচ চালাচ্ছে। এ কারণে ৪০ শতাংশ পরিবারের ঋণ বেড়েছে।

পিপিআরসি পাঁচটি নতুন ঝুঁকির বিষয় চিহ্নিত করেছে—দীর্ঘস্থায়ী রোগে পরিবারের চিকিৎসা ব্যয় ও ঋণ বৃদ্ধি।নারীপ্রধান পরিবারগুলোর চরম দারিদ্র্যের ঝুঁকি। আয়-বৈষম্য ও ঋণ নির্ভর জীবনযাত্রা,খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা।এখনো ৩৬ শতাংশ মানুষের নন-স্যানিটারি টয়লেট ব্যবহার।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, কর্মসংস্থানের সংকট তীব্র হচ্ছে। কর্মজীবীদের ৩৮ শতাংশ পূর্ণ সময় কাজ পাচ্ছেন না, অর্থাৎ তারা ছদ্মবেকার। নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হারও মাত্র ২৬ শতাংশ। অধিকাংশ মানুষ অনানুষ্ঠানিক খাতে স্বনিয়োজিত হয়ে কাজ করছেন, যেটি অনিশ্চিত ও অরক্ষিত।

তবে পিপিআরসি আশার চারটি উৎসও চিহ্নিত করেছে—প্রবাসী আয়, বড় ভোক্তা বাজার, ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রতি অভ্যস্ততা এবং ভোক্তার মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এখন প্রয়োজন তিন স্তরের উদ্যোগ—স্বল্পমেয়াদি সংকটে পড়া পরিবারকে জরুরি সহায়তা ও দীর্ঘস্থায়ী রোগ মোকাবিলায় নতুন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি।

মধ্যমেয়াদি কর্মসংস্থান বাড়াতে সম্ভাবনাময় খাতগুলোর জন্য কৌশলগত সহায়তা প্যাকেজ ও সরকারি-বেসরকারি যৌথ টাস্কফোর্স।দীর্ঘমেয়াদি অর্থনীতির পরিকল্পনায় শুধু জিডিপি নয়, বরং সমতা, ন্যায়বিচার ও বৈষম্য হ্রাসে জনমুখী দৃষ্টি (পিপলস লেন্স) রাখা।