দেশে মোটরসাইকেল বাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে

প্রতিবেদক: দীর্ঘ সময় খারাপ অবস্থা কাটিয়ে উঠেছে দেশের মোটরসাইকেল বাজার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোটরসাইকেল বিক্রি ১৭ শতাংশ বেড়েছে। উৎপাদনকারী ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে সারা দেশে প্রায় সাড়ে চার লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে, যেখানে আগের বছর এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার।

বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের চিফ মার্কেটিং অফিসার শাহ মোহাম্মদ আশেকুর রহমান বলেন, “বর্তমানে দেশের মোটরসাইকেল বাজারে একটি আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আমরা লক্ষ করছি যে গত কয়েক মাস ধরে বিক্রি বাড়ছে এবং গ্রাহক চাহিদাও ঊর্ধ্বমুখী। আমাদের কোম্পানির পারফরম্যান্সও সন্তোষজনক।”

তিনি মোটরসাইকেল বিক্রি বৃদ্ধির চারটি মূল কারণ উল্লেখ করেন—মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসা, ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা, কৃষি অর্থনীতির ইতিবাচক প্রবাহ এবং প্রবাসী আয়ের বৃদ্ধি। এছাড়া, কোম্পানিগুলোর মতে, গত বছরের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর নতুন একটি ক্রেতা শ্রেণি তৈরি হয়েছে, যাঁরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জড়িত।

২০১৮ সালের পর থেকে দেশে জাপান ও ভারতের বিভিন্ন ব্র্যান্ডসহ ৯টির মতো মোটরসাইকেল কারখানা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে ইয়ামাহা, হোন্ডা, সুজুকি, টিভিএস, হিরো, রানার এবং সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের রয়েল এনফিল্ড।

বর্তমানে বাজারে শীর্ষে রয়েছে বাজাজ। এসিআই মোটরস জানিয়েছে, তারা দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। তারা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮৬ হাজার ১২৫টি মোটরসাইকেল বিক্রি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেশি। ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের একমাত্র পরিবেশক এসিআই মোটরসের ডিএমডি সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, “শুরুর সময় ইয়ামাহার বিক্রি ছিল কয়েক হাজার। এখন আমরা দ্বিতীয় স্থানে। বাংলাদেশের মানুষ জাপানি ব্র্যান্ডে আস্থা রাখেন এবং উন্নত মান, ব্রেকিং সিস্টেম ও নির্ভরতার জন্য ইয়ামাহা জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

বাজারে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সুজুকি, এরপর রয়েছে হিরো, হোন্ডা, টিভিএস, রয়েল এনফিন্ড, রানার ইত্যাদি ব্র্যান্ড। বিগত অর্থবছরে হিরো ও হোন্ডা তুলনামূলক ভালো করেছে। হিরোর বিক্রি বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি এবং হোন্ডার ৩০ শতাংশের বেশি। হিরো প্রায় ৮০ হাজার এবং হোন্ডা ৭৩ হাজারের বেশি মোটরসাইকেল বিক্রি করেছে।

তবে ২০২১ ও ২০২২ সালে বছরে গড়ে প্রায় ছয় লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হলেও পরে বিক্রিতে ভাটা পড়ে। এর মূল কারণ ছিল ডলারের দাম বৃদ্ধি। ২০২২ সালের শুরুর দিকে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা, যা বর্তমানে ১২২ টাকার আশপাশে। এর ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, কারণ অধিকাংশ যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হয়। তবে সাম্প্রতিক সময় ডলারের দাম স্থিতিশীল হয়েছে, সরবরাহ বেড়েছে এবং আমদানি সহজ হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি জুনে ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে, যা এক সময় ১২ শতাংশ ছাড়িয়েছিল। কৃষি খাতেও ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় গ্রামে টাকার প্রবাহ বেড়েছে, ফলে মোটরসাইকেলের চাহিদাও বেড়েছে।

তবে কোম্পানিগুলো বলছে, এখনো বাজার পুরোপুরি আশাব্যঞ্জক নয়। ২০১৮ সালের নীতিমালা অনুযায়ী ২০২৭ সালের মধ্যে বছরে ১০ লাখ মোটরসাইকেল উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে হিসাবে ২০২৫ সালেই ৮ লাখ ইউনিট উৎপাদন হওয়ার কথা, কিন্তু বাস্তবে খাতটি অনেক পিছিয়ে।

এইচএমসিএল নিলয় বাংলাদেশ লিমিটেডের কোম্পানি সচিব ও সিএফও বিজয় কুমার মণ্ডল বলেন, “২০২৩ সাল পর্যন্ত বাজার এগোচ্ছিল। এরপর ডলারের দাম ও মূল্যস্ফীতির কারণে বিক্রি কমে যায়।” তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, “২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোটরসাইকেল বাজারে ১৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হতে পারে।”