
প্রতিবেদক: কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, দেশে কোনো পণ্য কেনার আগে মানুষকে ভাবতে হয় সেটি আসল নাকি নকল। বিদেশে এমন উদ্বেগ থাকে না। দেশে এমন কোনো পণ্য নেই, যা নকল হয় না। আজ মঙ্গলবার বিশ্ব মান দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আরও বলেন, একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়তে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। সেই প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত কেবল বা তারের মান এক নম্বর থেকে চার নম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন রকমের হয়। নিম্নমানের তার বিদ্যুতের লোড সামলাতে না পেরে রাতের বেলায় আগুন লাগার কারণ হয়। এতে পুরো শিল্পপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শ্রমিকেরা কর্মসংস্থান হারায়।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, দেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একটি হালাল পণ্য পরীক্ষাগার আছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে সেটি পরিদর্শন করে দেখেছেন, পরীক্ষাগারের অবস্থা উপজেলা পর্যায়ের একটি কলেজের রসায়ন ল্যাবের মতো; ধুলাবালিতে ভরা এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতাহীন। এতে হালাল পণ্যের খুঁটিনাটি মান যাচাই করা সম্ভব নয়। তবে সঠিকভাবে উদ্যোগ নেওয়া গেলে আগামী পাঁচ বছরে বিশ্বের হালাল পণ্যের বাজারে বাংলাদেশ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপউপাচার্য আবদুল হাসিব চৌধুরী। প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী এবং এফবিসিসিআইয়ের হেড অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স মো. জাফর ইকবাল। সভার সভাপতিত্ব করেন বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম।
বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম বলেন, মানের বিষয়টি শুধু পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও সেবার ক্ষেত্রেও মান জরুরি।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, পবিত্র রমজান এলেই ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশি মুনাফা করার প্রবণতা দেখা যায়। বিশ্বের অনেক অমুসলিম দেশ রমজানে দ্রব্যমূল্য কমায়, কিন্তু বাংলাদেশে তা সম্ভব হয় না। তাঁর মতে, নৈতিকতার ঘাটতি ও সীমিত নজরদারি নকল ও ভেজাল পণ্য ঠেকাতে বড় বাধা। তিনি আরও জানান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন অনেক প্রতিষ্ঠান থাকলেও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা ১৪টি প্রধান প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই লোকসানে চলছে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, বেসরকারি খাতের পক্ষে উচ্চমূল্যের যন্ত্রপাতি কিনে মান সনদ প্রদান করা সম্ভব নয়। সরকারের বিনিয়োগ করা জাতীয় মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ের মাধ্যমে হালাল সনদ প্রক্রিয়াকে সহজ ও প্রসারযোগ্য করতে হবে। তিনি জানান, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশের হালাল পণ্যের স্বীকৃতি এখনো সীমিত এবং তা বাড়াতে উদ্যোগ প্রয়োজন।