
প্রতিবেদক: বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের ৩৮৫টি কারখানার ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন ন্যূনতম মজুরি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেছে ৬৮ শতাংশ কারখানা। তবে বাকি ৩২ শতাংশ বিভিন্ন কারণে সর্বশেষ ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এই ৩২ শতাংশের মধ্যে ২২ শতাংশ আগের চেয়ে মজুরি বৃদ্ধি করেছে।
গবেষণাটি যৌথভাবে পরিচালিত হয়েছে সাসটেইনেবল টেক্সটাইল ইনিশিয়েটিভ: টুগেদার ফর চেঞ্জ (স্টিচ) এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে। এটি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে করা হয়। স্টিচ একটি বহুদেশভিত্তিক কর্মসূচি, যা তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের সরবরাহ চেইনে শ্রম পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য কাজ করে। নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় এথিকাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভ, মনডিয়া এফএনভি এবং ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশে এটি বাস্তবায়ন করছে।
গবেষণায় অংশ নেয় ১,১১৩ জন শ্রমিক, যাদের মধ্যে ৮১ শতাংশ ন্যূনতম মজুরি পান। বিশেষত, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) অবস্থিত এবং ইপিজেডের বাইরের বড় কারখানাগুলো প্রায় সবই ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করেছে। যারা বাস্তবায়ন করেছে, তাদের ৮০ শতাংশ বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্য, যা সরাসরি রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত।
গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে যে, কিছু কারখানা ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করতে পারছে না, যার মধ্যে বেশিরভাগই মাঝারি বা ছোট কারখানা। এসব কারখানা পরিচালন ও উৎপাদন ব্যয়ের কারণে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়নি। অন্যদিকে, বড় এবং ইপিজেডভুক্ত কারখানাগুলো দ্রুতই মজুরি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে।
গবেষণায় আরো কিছু চ্যালেঞ্জ উঠে এসেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—পরিচালন ও উৎপাদন ব্যয়ের বৃদ্ধি, মজুরি বাড়ানোর হারের সঙ্গে ক্রেতাগোষ্ঠী পণ্যের দাম না বাড়ানো, পুঁজির অভাব, প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের সংকট, সরকারি সহযোগিতার অভাব এবং মালিকদের অনিচ্ছা। কিছু কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের নিয়োগের সময়ই ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের অক্ষমতার কথা জানিয়ে দেন।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে প্রধান অন্তরায় হচ্ছে ক্রেতাগোষ্ঠী ন্যায্য দাম প্রদান না করা। তিনি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এবং ব্র্যান্ড–ক্রেতাদের সংগঠনগুলোর প্রতি পোশাকের দাম বাড়ানোর জন্য মধ্যস্থতার আহ্বান জানান।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যারা ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করেছেন, তাদের ৭৫ শতাংশ খরচ বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন। ৮৩ শতাংশ কারখানা জানিয়েছে, নতুন মজুরি বাস্তবায়নে তারা সরকারের বা ক্রেতাদের কাছ থেকে কোনও সহযোগিতা পায়নি। এছাড়া শ্রমিকরা জানান, তাদের মজুরি বেড়েছে, তবে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়নি কারণ বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর মধ্যে বেতনের বৈষম্যও রয়েছে।
এ বিষয়ে শ্রমিক সংগঠন, উদ্যোক্তা, সরকার ও শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেছেন এবং আরও গবেষণার সুপারিশ করেছেন। তারা ন্যূনতম মজুরির ওপর শিল্পের অংশীজনদের মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে বলেন, যদি মালিক-শ্রমিকের মধ্যে কার্যকর সামাজিক সংলাপ গড়ে ওঠে, তাহলে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন সহজতর হবে।