
অনলাইন ডেক্স: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতির প্রকৃত তথ্য এখন সামনে আসছে, যা সাধারণ মানুষের মতো অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকেও রেকর্ড–ছোঁয়া খাদ্য মূল্যস্ফীতির মুখোমুখি করেছে। শীত মৌসুমে শাকসবজির দাম কম থাকলেও, নতুন বাজেট ঘোষণা আগামী জুনে হবে, ততদিনে এসব পণ্যের দাম কমে না যেতে পারে।
এদিকে, মার্কিন ডলারের সংকট পুরোপুরি কেটে যায়নি, আর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের অবস্থা খারাপ। যদিও রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কিছুটা ভালো, তবে সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে টেকসই উন্নয়ন এখনও আসেনি।
এ অবস্থার প্রেক্ষিতে, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জন্য সাড়ে আট লাখ কোটি টাকার বাজেট তৈরির পরিকল্পনা করছে। বর্তমানে চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, এবং আগামী বাজেটের আকার ৫০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রায় ৮ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার হতে পারে। তবে, জাতীয় সংসদ না থাকায় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই বাজেট ঘোষণা হবে, এবং এর জন্য নির্দিষ্ট তারিখ এখনও ঠিক হয়নি।
২০২৫ সালের বাজেট প্রস্তুতির কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে, এবং ফেব্রুয়ারি থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু হবে। এসব বৈঠকে ওঠা সুপারিশগুলোর প্রতিফলন থাকবে বাজেটে। অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তব্যে সংস্কার কমিশন ও কমিটিগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করবেন এবং ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের অবদানের স্বীকৃতির কথাও বলবেন।
তবে, সরকারের আর্থিক পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় আগামী বাজেট অত বড় করার পরিকল্পনা নেই। মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য চলতি অর্থবছরে সরকারকে নিত্যপণ্য আমদানিতে অনেক শুল্ক ছাড় দিতে হয়েছে। এই ঘাটতি পূরণে, সরকার নতুন কিছু পণ্যে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ করার জন্য আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা আজ রোববার অধ্যাদেশ জারি হওয়ার কথা রয়েছে।
বর্তমানে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকলেও সরকার এটিকে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায়। এ জন্য বাজেটে কিছু নীতি সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। এছাড়া, জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫.৫ শতাংশ হতে পারে, যদিও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি প্রাক্কলন অনুযায়ী, ৫ শতাংশের বেশি অর্জন করা কঠিন হবে।
২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়, তবে নতুন বাজেটে এটি ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বেশি বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়া হবে না এবং বিদেশি অর্থায়নে নজর দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বাড়তি বরাদ্দও থাকবে আগামী বাজেটে। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেছেন, আগামী বাজেট বাস্তবভিত্তিক হওয়া উচিত এবং মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার অতি আশাবাদী চিন্তা পরিহার করা দরকার।
সেলিম রায়হান আরও বলেন, বাজেট পাস হওয়ার এক মাসের মধ্যে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরেও লক্ষ্যভিত্তিক পর্যালোচনা করা হয়নি। এখন, সরকারকে অন্তত জুলাই আন্দোলনের চেতনা বজায় রেখে আগামী বাজেটের রূপরেখা প্রণয়ন করা উচিত, যাতে মানুষ দীর্ঘমেয়াদে উপকৃত হতে পারে।