নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য বিডার ওয়ান–স্টপ সার্ভিস গাইড

প্রতিবেদক: বাংলাদেশে নতুন করে ব্যবসা বা বিনিয়োগ শুরু করতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধন ও লাইসেন্স নিতে হয়। একসময় এসব কাজ আলাদা আলাদা সংস্থায় গিয়ে করতে হতো, যা সময়সাপেক্ষ ও ঝামেলাপূর্ণ ছিল। তবে এখন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) তাদের ওয়ান–স্টপ সার্ভিস (OSS) প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে একটি মাত্র আবেদনেই ব্যবসা শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় পাঁচটি নিবন্ধন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এই প্রক্রিয়ায় আপনি খুব সহজে নামের ছাড়পত্র, ব্যাংক হিসাব খোলা, কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন, করপোরেট টিআইএন ও ট্রেড লাইসেন্স পেতে পারেন।

প্রথমবার বিডার সেবা নিতে চাইলে আপনাকে OSS পোর্টালে নিবন্ধন করতে হবে। এজন্য হোমপেজে থাকা ‘OSSPID’ অপশনে ক্লিক করে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাইন আপ করতে হবে। নিবন্ধনের পর আপনি একটি ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড পাবেন, যার মাধ্যমে পরবর্তীতে লগইন করে সব ধরনের সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। লগইনের পর ব্যবহারকারীদের একটি রেজিস্ট্রেশন ফর্ম পূরণ করতে হয়, যেখানে নাম, জন্মতারিখ, প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত তথ্য, জাতীয়তা ও যোগাযোগের ঠিকানা ইত্যাদি তথ্য দিতে হয়। ফর্মটি সফলভাবে পূরণ হলে আপনি ইউজার ড্যাশবোর্ডে প্রবেশ করতে পারবেন।

এরপর আপনাকে কোম্পানির প্রাথমিক তথ্য দিয়ে একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে। এই ফর্মে কোম্পানির নাম, ধরন, দেশ, খাত, প্রধান পণ্য বা সেবা ইত্যাদি তথ্য দিতে হয়। ফর্মটি জমা দেওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই বিডার পক্ষ থেকে তা অনুমোদন করা হয়। এই অনুমোদনের পর আপনি ড্যাশবোর্ড থেকে যেকোনো প্রয়োজনীয় লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

এক আবেদনেই আপনি পাঁচটি সেবা নিতে পারবেন—নামের ছাড়পত্র, করপোরেট ব্যাংক হিসাব খোলা, কোম্পানি নিবন্ধন, করপোরেট টিআইএন এবং ট্রেড লাইসেন্স। এজন্য ড্যাশবোর্ড থেকে ‘বিজনেস লাইসেন্স’ মেনুতে গিয়ে ‘মাল্টিপল লাইসেন্স’ অপশন বেছে নিতে হবে। এরপর একটি নতুন উইন্ডো খুলবে এবং টার্মস ও কন্ডিশনে ক্লিক করার পর ফর্মগুলো ধাপে ধাপে আসবে।

প্রথমেই থাকবে ‘নেম ক্লিয়ারেন্স’ বা নামের ছাড়পত্র। এখানে আপনার প্রতিষ্ঠানের নামটি আগে থেকেই নিবন্ধিত কি না তা যাচাই করা যাবে। নামটি পাওয়া গেলে আপনি সহজেই ছাড়পত্রের আবেদন করতে পারবেন এবং অনলাইনে ফি জমা দিয়ে আবেদনটি সম্পন্ন করতে পারবেন।

নামের ছাড়পত্র অনুমোদনের পর দ্বিতীয় ধাপে আসবে করপোরেট ব্যাংক হিসাব খোলার আবেদন। পূর্বের তথ্য অনুযায়ী ফর্মটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ হবে। শুধু ব্যাংকের নাম বেছে নিয়ে কনফার্ম করে আবেদন জমা দিতে হবে। এরপর আসবে কোম্পানি রেজিস্ট্রেশনের ধাপ। এখানে অতিরিক্ত কিছু তথ্য যেমন পরিচালক ও শেয়ারধারীর সংখ্যা, এমডি বা চেয়ারম্যানের মেয়াদ ইত্যাদি পূরণ করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন ফি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারণ হবে এবং অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে।

কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে আপনি করপোরেট টিআইএনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই আবেদন ফর্মটিও স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ হবে এবং আপনি কেবল কনফার্ম করে জমা দেবেন। এরপর আপনি ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের কিছু অতিরিক্ত নির্দেশনা অনুসারে তথ্য দিতে হতে পারে। আবেদন জমা দেওয়ার পর ফি নির্ধারণ হবে এবং অনলাইনে পেমেন্ট করে আবেদন সম্পন্ন করা যাবে।

প্রতিটি আবেদনের অগ্রগতি আপনি OSS ড্যাশবোর্ডে দেখতে পারবেন। পাশাপাশি প্রতিটি ধাপের আপডেট ই-মেইল নোটিফিকেশনের মাধ্যমেও জানিয়ে দেওয়া হবে। চাইলে আপনি এক ফর্মে একসাথে সব আবেদন করতে পারেন বা আলাদা আলাদাভাবেও করতে পারেন। তবে আবেদন অসম্পূর্ণ হলে, ভুল বা ভুয়া তথ্য দিলে বিডা সেই আবেদন গ্রহণ না-ও করতে পারে এবং আপনাকে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আবেদনকারী ইউজার ড্যাশবোর্ড থেকেই লাইসেন্স বা সনদগুলো দেখতে এবং ডাউনলোড করতে পারবেন। বিডার এই ডিজিটাল সেবার ফলে এখন নতুন ব্যবসা বা বিনিয়োগ শুরু করা আগের চেয়ে অনেক সহজ, স্বচ্ছ ও সময় সাশ্রয়ী হয়েছে।