নতুন শুল্কনীতিতে কেজিপ্রতি খেজুরের দাম কমেছে ৩৫-৪৪০ টাকা

অনলাইন ডেক্স: রমজানের আগে ইফতারের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ খেজুরের দাম কমতে শুরু করেছে। গত এক মাসে পাইকারি বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি খেজুরের দাম ৩৫ থেকে ৪৪০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের মতে, সরকারের কর অব্যাহতি, কাস্টমস ডিউটি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ এবং অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু কমানোর ফলে খেজুরের দাম কমেছে।

চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার ফলমণ্ডির ব্যবসায়ী রহমত আলী জানান, সৌদি আরবের মাবরুম খেজুরের প্রতি কেজির দাম এক মাস আগেও ১,৬০০ টাকা ছিল, যা এখন ১,২০০ টাকায় নেমে এসেছে। আজওয়া খেজুর মানভেদে ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ৬৪০ থেকে ৮০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। মিশরীয় মেডজুল খেজুরের দামও প্রতি কেজিতে ৪৪০ টাকা কমে বর্তমানে ৯২০-৯৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া, ইরাকি জায়েদি খেজুর প্রতি কেজি ৩৫০-৩৭০ টাকা (কমেছে ১৭০ টাকা), ইরাকি নাগাল ৫৬০-৫৭০ টাকা (কমেছে ১৬০ টাকা), ইরাকি দাব্বাস ৭০০ টাকা (কমেছে ১৬০ টাকা) এবং তিউনিসিয়ার ছররা ৪০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে (কমেছে ১৪০ টাকা)। সবচেয়ে কমদামি বস্তা খেজুর, যা আগে ১৫৫-১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো, এখন ১২৫-১৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

মায়েদা ডেটস-এর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ জাহেদ বলেন, “করোনাকালে দেশে খেজুরের চাহিদা বাড়তে থাকায় আমদানিও বেড়েছিল। তবে গত বছর সরকারের শুল্ক ও অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু বৃদ্ধির ফলে আমদানি ও চাহিদা দুটোই কমে যায়। বর্তমানে সরকার খেজুরের শুল্ক কমানোর পাশাপাশি ৫ শতাংশ অগ্রিম কর অব্যাহতি ও অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু হ্রাস করায় আমদানি পুনরায় বেড়েছে এবং দামও কমেছে।”

রমজানের আগে খেজুরের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় এর দাম কেজিতে ৩৫ থেকে ৪৪০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। সরকারের শুল্ক-কর হ্রাস ও আমদানি সুবিধার ফলে বাজারে এ প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত খেজুর আমদানিতে ২৫% কাস্টমস ডিউটি, ১৫% মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), ১০% অগ্রিম আয়কর (AIT), ৩% নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (RD) এবং ৫% অগ্রিম করসহ মোট ৬৩.৬০% শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হতো। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই হার ছিল ৫৯%, আর ২০২২ সালের আগ পর্যন্ত মোট শুল্ক-কর ছিল মাত্র ১৫.৬%।

বর্তমান সরকারের শুল্কহার কমানোর উদ্যোগে আমদানি বেড়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৪,২৫৩ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ২০,২৬৩ টন। বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (BFFIA) তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ৬০-৯০ হাজার টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে, যার মধ্যে রমজান মাসেই প্রয়োজন হয় প্রায় ৪০ হাজার টন।

ভালো মানের খেজুরের (আজওয়া, মরিয়ম, মেডজুল, মাবরুম, আম্বর) অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু কেজিতে ৪ ডলার থেকে কমিয়ে ৩.৭৫ ডলার করেছে এনবিআর। রেফ্রিজারেটেড কনটেইনারে আলজেরিয়া ও তিউনিশিয়া থেকে আমদানিকৃত খেজুরের অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু ৩ ডলার থেকে কমিয়ে ২.৬০ ডলার করা হয়েছে। ইরাক ছাড়া অন্যান্য কার্টনজাত খেজুরের অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু ২.৫০ ডলার থেকে ২.১০ ডলারে নামানো হয়েছে, আর ইরাকি খেজুরের ক্ষেত্রে এটি ২.৫০ ডলার থেকে ১ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।

বস্তায় আমদানিকৃত শুকনা খেজুরের অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু ২.৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ২ ডলার এবং ভেজা খেজুরের ক্ষেত্রে ১ ডলার থেকে কমিয়ে ০.৭০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে বস্তায় আমদানিকৃত নরম খেজুরের ক্রয়মূল্য কেজিপ্রতি ৬৫-৭৪ টাকা হলেও, গত বছর এনবিআর তা ১২০ টাকা অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু ধরে শুল্কায়ন করেছিল। এর ফলে প্রতি কেজি নিম্নমানের খেজুরে শুল্ক দিতে হয়েছে ৬৪.৪১ টাকা, যা বাজারে পৌঁছতে ১৩৮-১৪০ টাকা পড়ে যায় এবং খুচরায় ভোক্তাদের ২০০ টাকায় কিনতে হয়েছে।

২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত এই মানের খেজুরে মোট শুল্কহার (TTI) ছিল ১০%, এবং অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু ছিল টনপ্রতি ৫০০ ডলার। ফলে প্রতি কেজিতে শুল্ক দিতে হতো মাত্র ৫ টাকা ৪৫ পয়সা।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (CAB) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন জানান, গত বছর শুল্কহার বৃদ্ধির ফলে কমদামি খেজুরের শুল্কায়ন যথাযথ হয়নি, যার প্রভাব পড়েছিল নিম্নবিত্ত ভোক্তাদের ওপর। তবে এবারের শুল্কহার হ্রাসের ফলে আসন্ন রমজানে খেজুরের দাম সহনীয় থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।