নভেম্বরেই স্বাভাবিক হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য সম্পর্ক: পীযূষ গয়াল

প্রতিবেদক: বৈশ্বিক শুল্কযুদ্ধের কারণে তৈরি অস্থিরতার মাঝেও চলতি বছরের নভেম্বর নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বাণিজ্যচুক্তি না থাকায় যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় রপ্তানি পণ্যে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর ফলে রপ্তানি খাতে বড় ধরনের বিঘ্ন তৈরি হয়েছে।
২১তম বার্ষিক গ্লোবাল ইনভেস্টর কনফারেন্স ২০২৫-এ ভার্চ্যুয়াল ভাষণে গয়াল বলেন , আমরা অত্যন্ত অস্থির, অনিশ্চিত সময়ে বসবাস করছি। ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা ভয়ভীতি আছে। তবে আশা করছি, চলতি বছরের নভেম্বর নাগাদ দুই দেশের নেতাদের আলোচনার ধারাবাহিকতায় একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্ভব হবে।”

গয়ালের মতে, আলোচনায় বাণিজ্যের চেয়ে ভূরাজনীতি বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। তবুও ভারত আশাবাদী, শেষ পর্যন্ত উভয় দেশই সমঝোতার পথ খুঁজে নেবে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত শুল্কের বড় ভুক্তভোগী ভারত ও ব্রাজিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি করতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তবুও ভারত সরকার মনে করে, সমঝোতা ছাড়া উপায় নেই এবং সমাধান অবশেষে হবে।

দেশের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের প্রসঙ্গে গয়াল জানান, বহুল প্রতীক্ষিত জিএসটি সংস্কার বাস্তবায়নের পথে। বর্তমান ৫, ১২, ১৮ ও ২৮ শতাংশ করহার পরিবর্তে রাখা হবে কেবল ৫ ও ১৮ শতাংশ। বিলাসপণ্য ও ক্ষতিকর সামগ্রীর জন্য বিশেষভাবে ৪০ শতাংশ জিএসটি হার প্রস্তাব করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ সংস্কার ভোক্তাদের আস্থা বাড়াবে, বাজারে চাহিদা বাড়াবে এবং কর-সংক্রান্ত প্রক্রিয়া সহজ করবে। ইতিমধ্যেই করপোরেট কর কমে ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যা স্বাধীনতার পর সর্বনিম্ন।

বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, মার্কিন নীতিগত অনিশ্চয়তার মাঝেই ভারতের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। এরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৭.৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে, যা গত পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ। বেসরকারি খাতে মূলধন ব্যয় বেড়েছে ৬৬ শতাংশ।
তাঁর ভাষায়, “ভারত এখন শুধু দেশীয় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে না, বাইরেও বিনিয়োগ করছে।”

এ সময় তিনি আরও বলেন—এফডিআই ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।প্রতি মাসে লাখ লাখ নতুন ডিমান্ড হিসাব খোলা হচ্ছে।ভোক্তা মূল্যস্ফীতি বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় রয়েছে।

ভারত বর্তমানে মরিশাস, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এফডিআই চুক্তি সম্পাদন করেছে। এছাড়া পুরো ইএফটিএ ব্লক (নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, লিচেনস্টাইন ও আইসল্যান্ড)-এর সঙ্গে চুক্তির আলোচনা চলছে। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও সংলাপ এগোচ্ছে। বাণিজ্যসচিব বর্তমানে ব্রাসেলসে অবস্থান করছেন বলে জানান গয়াল।

গয়াল আরও বলেন, ব্যাংকিং খাত বহু বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করেছে। বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের শেয়ার থেকে ভালো মুনাফা করেছেন, আর ব্যাংকিং ব্যবস্থায় এখন সব অংশীজন নিজেদের আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি নিরাপদ মনে করছেন।