
প্রতিবেদক: দেশের বেসরকারি মালিকানাধীন উড়োজাহাজ সংস্থা নভোএয়ার এখন সেবা বন্ধের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। বিপুল লোকসানের কারণে প্রতিষ্ঠানটির মালিকেরা নভোএয়ার বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন। এরই মধ্যে একটি সম্ভাব্য বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিক্রির আলোচনা চলছে।
নভোএয়ার এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, নভোএয়ার কর্তৃপক্ষ তাদের উড়োজাহাজসহ অন্যান্য সম্পদ বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। একটি বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান উড়োজাহাজগুলোর নিরীক্ষা করতে চায়, যা চলতি মাসে হওয়ার কথা রয়েছে।
সংস্থাটির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত একাধিক শীর্ষ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিপুল লোকসানের কারণে সংস্থাটি বন্ধ করার পরিবর্তে বিক্রির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি চালু রাখার চেষ্টা চলছে। মালিকেরা মনে করছেন, বিক্রি হলে তারা বড় ধরনের লোকসান থেকে বাঁচবেন, এবং মালিকানা বদলে সংস্থাটি ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবে। যদি বিক্রির প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়, তবে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের বিষয়টি বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান জানিয়েছেন, “আমাদের বিমান পরিবহন সেবা এখনও চলমান রয়েছে, তবে আমরা আমাদের উড়োজাহাজ এবং অন্যান্য সম্পদ বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আমরা চেষ্টা করছি প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ না করে বিক্রির মাধ্যমে মালিকানা হস্তান্তরের।”
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, বিমানের জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে গত কয়েক বছর ধরে নভোএয়ার ব্যাপক লোকসানে পড়েছে। এক-দেড় বছর ধরে দেশীয় এবং বিদেশি ক্রেতা খোঁজা হলেও, বনিবনা না হওয়ায় সেই বিক্রির প্রক্রিয়া এগোয়নি। বর্তমানে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিক্রির আলোচনা চলমান রয়েছে।
২০১৩ সালে বাণিজ্যিক উড্ডয়ন শুরু করা নভোএয়ার বর্তমানে অভ্যন্তরীণ ছয়টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে—ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা-যশোর, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-রাজশাহী এবং ঢাকা-সৈয়দপুর। এছাড়া, ঢাকা-কলকাতা আন্তর্জাতিক পথে ফ্লাইট পরিচালনা করলেও সেটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
সংস্থাটির হাতে বর্তমানে পাঁচটি এটিআর মডেলের উড়োজাহাজ রয়েছে, যার প্রতিটির আসনসংখ্যা ৭২। নভোএয়ারের প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন কার্যালয়ে প্রায় ৬৫০ জন কর্মী নিয়োজিত আছেন।
তবে, নভোএয়ারের একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ১৫০ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ রয়েছে, এবং অন্যান্য কিছু দায়দেনাও রয়েছে। এই ঋণ পরিশোধের জন্য উড়োজাহাজসহ অন্যান্য সম্পদ বিক্রি করতে চাইছে সংস্থাটি। প্রতিষ্ঠানটি যদি এখন বন্ধ হয়, তবে কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে প্রায় ৩০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। কর্তৃপক্ষ মনে করছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্পদ বিক্রি করে তারা এই দায়দেনার কিছু অংশ পরিশোধ করতে পারবে, তবে দীর্ঘ সময় ব্যবসা চালিয়ে গেলে লোকসান আরও বাড়বে এবং ঋণ পরিশোধ কঠিন হবে।
নভোএয়ারের মালিকেরা বর্তমানে আর নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী নয়, কারণ উড়োজাহাজের মডেল কয়েক বছরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাবে, এবং নতুন উড়োজাহাজ কিনতে বা ভাড়ায় আনতে ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে।
নভোএয়ারের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে তুসুকা গ্রুপের কর্ণধার আরশাদ জামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও, তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
২০২০ সালে দেশের আরেকটি বেসরকারি বিমান সংস্থা রিজেন্ট এয়ারওয়েজ বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ এবং জিএমজি এয়ারলাইনসও লোকসানের কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে নভোএয়ার ছাড়াও দেশে দুইটি বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস ও এয়ার অ্যাস্ট্রা কার্যক্রম চালাচ্ছে, এবং সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ বিমান অভ্যন্তরীণ কয়েকটি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।