
প্রতিবেদক: সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে, কর ফাঁকির কারণে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ আনুমানিক দুই লাখ ২৬ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ঘাটতির পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে করপোরেট কর ফাঁকি, যার পরিমাণ প্রায় এক লাখ ১৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা—মোট কর ফাঁকির প্রায় ৫০ শতাংশ।
সোমবার সিপিডির কার্যালয়ে “বাংলাদেশের উত্তরণে করপোরেট আয়কর সংস্কার” বিষয়ক এক ব্রিফিংয়ে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। গবেষণায় বলা হয়, কর ফাঁকির প্রবণতা বাংলাদেশে নতুন নয়। ২০১১ সাল থেকে এই প্রবণতা বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১২ সালে কর ফাঁকির পরিমাণ ছিল ৯৬ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা এবং ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ৩৩ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকায়।
সিপিডির মতে, বাংলাদেশের কর ফাঁকির ক্রমবর্ধমান চিত্রের পেছনে রয়েছে উচ্চ কর হার, দুর্বল প্রশাসনিক কাঠামো, জটিল আইনি প্রক্রিয়া এবং কর ব্যবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতি। এ ছাড়া, এই উচ্চ হারে কর ফাঁকি সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে এবং তাদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে, যা সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে এই কর ফাঁকি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে সিপিডি মনে করে। কারণ, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ার পর বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করা হয়। অথচ কর ব্যবস্থার দুর্বলতা ও ফাঁকির সুযোগ অব্যাহত থাকলে এসব কোম্পানি তা কাজে লাগিয়ে আরও কর ফাঁকি দিতে পারে।
এই সমস্যা মোকাবিলায় সিপিডি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালীকরণ, ডিজিটাল অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং কর নীতিতে ব্যাপক সংস্কারের সুপারিশ করেছে। তাদের মতে, এই সংস্কার ছাড়া কর ফাঁকির প্রবণতা রোধ করা কঠিন হবে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উত্তরণ ব্যাহত হতে পারে।