
অনলাইন ডেক্স: নিত্যপণ্যের বাজার এখন মোটামুটি স্বাভাবিক থাকলেও সামনে কী হবে, তা নিয়ে শঙ্কায় ক্রেতারা। রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে গিয়ে বেসরকারি চাকরিজীবী রিয়াজ হাসান বললেন, “রোজা শুরু হলেই ব্যবসায়ীরা বেতাল হয়ে যায়।” অন্যদিকে, ভোজ্যতেলের সংকট নিয়ে ভুক্তভোগী রহিমা সুলতানা বলেন, “মহল্লায় না পেয়ে কারওয়ান বাজারে এলাম। আট-দশটা দোকানে ঘুরেও তেল পেলাম না। এই তেল গেল কোথায়?”
প্রতি বছর রোজার আগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সরবরাহ সংকট দেখিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এবার বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রিত থাকলেও ক্রেতাদের মনে পুরনো ভয় কাটছে না। রোজা শুরু হলে কিছু পণ্যের সরবরাহ কমে গিয়ে দাম বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
এ বছর ভালো ফলনের কারণে সবজির দাম কিছুটা সহনীয়। তবে ব্রয়লার মুরগি, ছোলা, বেগুন, লেবু, শসা ও বিদেশি ফলের দাম ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে। এগুলোর বেশির ভাগই ইফতারির উপকরণ, তাই চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও বাড়ছে।
দুই মাসের বেশি সময় ধরে ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা চলছে। সরকার শুল্ক ছাড় দিলেও আমদানিকারকরা নানা অজুহাতে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে। গেল সপ্তাহে ভোক্তা অধিদপ্তরের এক অনুষ্ঠানে আমদানিকারকরা সরবরাহ স্বাভাবিক করার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।
বুধবার ঢাকার মহাখালী, হাতিরপুল, তেজকুনিপাড়া ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভোজ্যতেলের সংকট আরও বেড়েছে। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ১০ দোকানে খুঁজলে মাত্র দুই-একটিতে পাওয়া যাচ্ছে। সরকার খোলা সয়াবিনের দাম প্রতি লিটার ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করলেও বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৮২ টাকায়। পাইকাররা বলছেন, তারা ১৭৫ টাকার বেশি দরে কিনছেন, তাই খুচরা পর্যায়ে দাম বেশি রাখা লাগছে।
তেল সংকট নিয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. নাইম বলেন, “পাইকারি দামে প্রতি লিটার ১৭৫ টাকার বেশি পড়ছে, তাই খুচরা বিক্রিতে দাম বাড়াতে হচ্ছে।”
তেজগাঁওয়ের মেঘনা গ্রুপের ডিলার হেলাল উদ্দিন জানান, “তিনবার ক্রয়াদেশ দিলেও এখনো তেল পাইনি। পাঁচ কার্টনের চাহিদা দিলে কোম্পানি পাঠাচ্ছে মাত্র দুই কার্টন।”
কারওয়ান বাজারের আরেক ডিলার সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে, তবে চাহিদার তুলনায় এখনো কম। প্রতিদিন ২০ কার্টন দরকার হলেও মিলছে মাত্র ১০ কার্টন। কয়েকটি মিল বন্ধ থাকায় সরবরাহ কমে গেছে।”
চট্টগ্রামেও একই অবস্থা
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেও ভোজ্যতেলের সংকট দেখা দিয়েছে। এক-দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন পাওয়া যাচ্ছে না, আর পাঁচ লিটারের বোতল কিনতে হলে বেশি দাম গুনতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক তাসলিম শাহরিয়ার বলেন, “মাত্র একটি কোম্পানির কিছু তেল বন্দরে পৌঁছেছে। মেঘনার একটি জাহাজ শুক্রবার আসবে, আরেকটি আসবে ৬ মার্চ। দেরিতে তেল আসায় বাজার ধরতে পারছি না, এতে লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে।”
রোজার আগে বাজার মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিয়ে সংকট বাড়ছে। আমদানিকারকদের প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। ফলে রোজা শুরুর পর পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ক্রেতারা।