
প্রতিবেদক: দেশের ভৌত অবকাঠামোর পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ের নির্মাণকাজে গতি কমে যাওয়ায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে সংশ্লিষ্ট শিল্প। হাউজিং, সিমেন্ট, স্টিল, সিরামিক, হার্ডওয়্যারসহ শতাধিক ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আহ্বান জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ দাবি উঠে আসে। বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ) ও বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ) নির্মাণ খাতকে চাঙ্গা করতে শুল্ক ও কর কমানোর দাবি জানায়।
সিমেন্ট খাত সিমেন্টের প্রধান উপকরণ ক্লিংকারের কাস্টমস ডিউটি (সিডি) গত বাজেটে ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা করা হয়েছিল, যা আমদানি মূল্যের প্রায় ১৫ শতাংশ। বিসিএমএ’র মতে, এতে ভোক্তাদের ওপর চাপ বেড়েছে এবং নির্মাণ খাত ধীরগতির হয়ে পড়েছে। সংগঠনটি ক্লিংকারের সিডি ২০০ টাকায় নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে।
স্টিল খাত দেশে লোহার খনি না থাকায় স্টিল আমদানিনির্ভর শিল্প। বিএসএমএ’র দাবি, শিল্পের টেকসই বিকাশে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার এবং আমদানি শুল্কহার কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
দেশের সম্ভাবনাময় ও প্রযুক্তিনির্ভর ওষুধশিল্প নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে রয়েছে। দেশীয় উৎপাদনের ফলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হলেও জরুরি জীবন রক্ষাকারী পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ১২৭.৭২ শতাংশ শুল্ক আরোপিত রয়েছে।
বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি এই শুল্কহার কমানো, অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য জরিমানা কমানো এবং নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
সিগারেট শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন কমেছে এবং চোরাচালান বেড়েছে। এতে লোকসানের মুখে পড়েছে কোম্পানিগুলো। তারা নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম ৫ টাকা কমানোর দাবি জানিয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এমটব) তাদের প্রস্তাবে দ্বৈত কর এড়ানো, করপোরেট করহার যৌক্তিক করা, ন্যূনতম কর সমন্বয় এবং টেলিকম মেশিনারি, ইকুইপমেন্ট ও সফটওয়্যারের জন্য পৃথক এইচএস কোড নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে।
বর্তমানে কার্বনেটেড বেভারেজের ওপর ৩ শতাংশ ন্যূনতম কর আরোপিত রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা এটি কমিয়ে ০.৬ শতাংশ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে বলেন,ব্যবসার বাধা তৈরি করে এবং খরচ বাড়ায় এমন বিধান সংশোধন করা হবে। উৎস করের চাপ কমানো হবে। আমরা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে চাই।”
প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান ছাড়াও আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের নীতি শাখার সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, আসন্ন বাজেটে কর ও শুল্ক নীতিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার এনে শিল্পের গতি বাড়ানো হবে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।