
প্রতিবেদক: পণ্য জীবাণুমুক্ত করার সেবা না পাওয়ায় মসলা, পশুখাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রীর রপ্তানি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব পণ্য বিদেশে পাঠানোর আগে গামা তেজস্ক্রিয়তার মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করতে হয়। কিন্তু সাভারের ইনস্টিটিউট অব রেডিয়েশন অ্যান্ড পলিমার টেকনোলজি (আইআরপিটি) ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে বন্ধ থাকায় রপ্তানিকারকদের দীর্ঘ বিলম্বে সেবা নিতে হচ্ছে। বিকল্প হিসেবে ইনস্টিটিউট অব ফুড অ্যান্ড রেডিয়েশন বায়োলজি (আইএফআরবি) সীমিত সেবা দিলেও তাদের সক্ষমতা কম হওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি অর্ধেক পর্যন্ত কমে গেছে।
রপ্তানিকারকেরা জানাচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপে মসলা ও পশুখাদ্য পাঠানোর আগে কঠোরভাবে জীবাণুমুক্তকরণের শর্ত পূরণ করতে হয়। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল জানান, যুক্তরাষ্ট্রে মাসে গড়ে ১০ টন মসলা রপ্তানির চাহিদা থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৫ টন রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে। স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজও একই সংকটে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা পারভেজ সাইফুল বলেন, ফেব্রুয়ারির ক্রয়াদেশ এখনো পাঠানো সম্ভব হয়নি; এক কনটেইনারে ২৬ টনের পরিবর্তে মাত্র ১৩ টন পাঠানো গেছে। ফলে রপ্তানি আয়ও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে আইআরপিটি ২ লাখ ৪৬ হাজার কেজি মসলা জীবাণুমুক্ত করেছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৯৬ হাজার কেজিতে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কিছুটা বেড়ে হলেও মাত্র ১ লাখ ১১ হাজার কেজি প্রক্রিয়াজাত হয়। স্কয়ার ফুড ২০২১ সালে ১৭২ টন মসলা রপ্তানি করলেও ২০২৩ সালে তা নেমে আসে ১৪ টনে।
আইআরপিটির পরিচালক রুহুল আমিন জানিয়েছেন, সক্ষমতা বাড়াতে প্রায় ৬৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যন্ত্রপাতি কেনা শেষ হলেও প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রকল্প শেষ করে পুনরায় বাণিজ্যিক সেবা চালু করা হবে।
শুধু মসলা নয়, ফার্মাসিউটিক্যাল খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইবনে সিনা ফার্মার জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক নাজমুল হাসান বলেন, প্রতিবছর ৫০–৬০ কোটি টাকার পণ্য দেশে জীবাণুমুক্ত করা হয়, কিন্তু চাহিদা ১০০ কোটি টাকারও বেশি। তাই আইড্রপসহ কিছু পণ্য বিদেশ থেকে জীবাণুমুক্ত অবস্থায় আমদানি করতে হচ্ছে, যা খরচ বাড়াচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গামা রশ্মির পাশাপাশি আধুনিক ইলেকট্রনিক বিম (ই-বিম) প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করলে সময় ও খরচ দুটোই কমবে। চীন ইতিমধ্যে এই খাতে বড় বিনিয়োগ করছে। তবে দেশে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে এগিয়ে না এলে বড় পরিসরে এ প্রযুক্তি চালু করা কঠিন হবে।
বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ মসলা, খাদ্যপণ্য ও চিকিৎসাসামগ্রী রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত তেজস্ক্রিয়তা কেন্দ্র না থাকায় রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন রেডিয়েশন প্ল্যান্ট তৈরি করা গেলে মসলা, শুকনা খাবার, মেডিকেল পণ্য ছাড়াও শাকসবজি, ফলমূল ও প্রাণী খাদ্য জীবাণুমুক্ত করে রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব হবে।