
প্রতিবেদক: ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় স্পেনের অর্থনীতি এগিয়ে আছে। পর্যটন, প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই), অভিবাসন এবং পরিবেশবান্ধব জ্বালানির কারণে দেশটি ইউরোজোনে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে।
২০২৫ সালে স্পেনের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে ২.৫ শতাংশ। তুলনায় ফ্রান্সে ০.৬, জার্মানিতে শূন্য এবং ইতালিতে ০.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে স্পেনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ০.৭ শতাংশ, যা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি।
অর্থমন্ত্রী কার্লোস কুয়ের্পো জানিয়েছেন, আগামী দুই বছরে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে স্পেন এগিয়ে থাকবে। দেশটির প্রবৃদ্ধি ভর করছে উচ্চ ভোক্তা ব্যয়, বিনিয়োগ, পর্যটন, অভিবাসন এবং নেক্সট জেনারেশন ইইউ ফান্ডের ওপর। শুধু পর্যটন নয়, তথ্যপ্রযুক্তি, আর্থিক ও নিরীক্ষা পরিষেবার রপ্তানি আয় পর্যটনের চেয়েও বেশি—১০ হাজার কোটি ইউরো বনাম ৯ হাজার ৪৯৫ কোটি ইউরো।
তবে মজুরি ও জীবনযাত্রার খরচে অসামঞ্জস্য, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, রাজনৈতিক বিভাজন এবং তরুণদের কর্মসংস্থান এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২১ সাল থেকে শ্রমশক্তি বৃদ্ধির ৯০ শতাংশ এসেছে অভিবাসন থেকে, যা সেবা খাত সম্প্রসারণ ও খরচ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করছে।
স্পেনের জিডিপিতে পর্যটনের অবদান প্রায় ১২ শতাংশ। মহামারি-পরবর্তী সময়ে দেশটির পর্যটন খাত দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪ সালে এই খাতে কর্মসংস্থান বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ লাখে, যা আগের বছরের তুলনায় ৯.৭ শতাংশ বেশি। তবে পর্যটকের ঢল স্থানীয় জনগণের অসন্তোষও বাড়াচ্ছে।
অভিবাসনের ওপর নির্ভর করে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করছে স্পেন। আগামী তিন বছরে দেশটি প্রায় ১০ লাখ অভিবাসী গ্রহণের পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে স্পেন চতুর্থ অবস্থানে। শুধু ২০২৫ সালেই চীন এককভাবে ১১ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করবে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ছিল সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী।
নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগের কারণে স্পেন বিদ্যুৎ খরচ কমাতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকালীন ইউরোপের জ্বালানি সংকটে স্পেন তেমন ভুগেনি। বর্তমানে নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে বিদেশি কোম্পানির বড় বিনিয়োগ দেশটিকে আরও আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করছে।
পর্যটন, বিনিয়োগ, অভিবাসন ও সবুজ জ্বালানিকে কাজে লাগিয়ে স্পেন ইউরোপের অর্থনীতিতে ব্যতিক্রমী এক সফলতার উদাহরণ হয়ে উঠছে।