পাঁচ বছরে আট গুণ বাড়তে পারে বাংলাদেশের খেলনা রপ্তানি

প্রতিবেদক: বাংলাদেশের খেলনা রপ্তানি আগামী পাঁচ বছরে আট গুণের বেশি বাড়তে পারে। ২০২২–২৩ অর্থবছরে বিশ্বের ৮৮টি দেশে বাংলাদেশ সাড়ে সাত কোটি ডলারের বেশি মূল্যের খেলনা রপ্তানি করেছে। প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২০৩০ সালে এ খাতের রপ্তানি আকার বেড়ে দাঁড়াতে পারে প্রায় ৪৭ কোটি ডলার। তখন বৈশ্বিক খেলনা রপ্তানিকারক দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান হবে ২৮তম।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘খেলনা উৎপাদন শিল্পে উদ্ভাবন ও রপ্তানির সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ। সভায় সভাপতিত্ব করেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২৭ কোটি ডলারের বেশি প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করেছে। পাশাপাশি প্রচ্ছন্ন রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১২০ কোটি ডলার। বর্তমানে প্লাস্টিক শিল্পের দেশীয় বাজারের আকার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা এবং এ খাত থেকে সরকার বছরে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব পাচ্ছে। দেশে প্রায় পাঁচ হাজার প্লাস্টিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার অধিকাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই)। এর মধ্যে খেলনা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ২৫০।

তবে খেলনাশিল্পে সম্ভাবনা থাকলেও কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। মান নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি, দুর্বল অবকাঠামো, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগের অভাব এবং মানসম্পন্ন ছাঁচ ও নকশা উন্নয়নে ঘাটতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ কঠিন হয়ে উঠছে।

সভায় ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, ২০৩২ সালের মধ্যে বিশ্বের খেলনা বাজারের আকার দাঁড়াবে ১৫০ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে এই বাজারের ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে চীন। তবে শ্রমমূল্য বেড়ে যাওয়ায় তারা নিম্নমানের খেলনা উৎপাদন থেকে সরে আসছে। এর ফলে বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। বর্তমানে দেশে খেলনা খাতে বিনিয়োগ ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হতে পারে।

আলোচনা সভায় উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞরা নানা মতামত তুলে ধরেন। রেডমিন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, খেলনা রপ্তানির জন্য আলাদা বাজার চিহ্নিত করা জরুরি। দেশে কিছু নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করা গেলেও আন্তর্জাতিক বাজারে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে হবে। গোল্ডেন সন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল আহমেদ বলেন, দেশে প্লাস্টিক খেলনা নিয়ে কোনো নীতিমালা নেই। এজন্য তাকে প্রচ্ছন্ন রপ্তানির লাইসেন্স নিতে হয়েছে। প্রিমিয়াফ্লেক্স প্লাস্টিক লিমিটেডের উপনির্বাহী পরিচালক আনিসুর রহমান মনে করেন, ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরির জন্য মানসম্পন্ন ছাঁচ ও নকশার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

পেটেন্ট, শিল্প–নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের পরিচালক অশোক কুমার রায় বলেন, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেধাস্বত্ব ও ট্রেডমার্ক ব্যবস্থায় আরও সচেতন হতে হবে। এতে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় তারা নিরাপত্তার বলয় পাবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মুহাম্মদ মুবিনুল কবীর বলেন, সরকার নীতিগত সহায়তা দেবে; তবে মান, প্রযুক্তি ও দক্ষতা উন্নয়নের দায়িত্ব উদ্যোক্তাদের নিজেদের নিতে হবে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের যুগ্ম প্রধান মামুন–উর–রশীদ আসকারী জানান, সরকার জাপান, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় খেলনাশিল্পকে অন্তর্ভুক্ত করছে। এজন্য রপ্তানি শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক কমানোর প্রয়োজন রয়েছে।

সব মিলিয়ে বাংলাদেশের খেলনাশিল্প এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও সম্ভাবনা অত্যন্ত বড়। বৈশ্বিক বাজারে চীনের ধীরে সরে দাঁড়ানো বাংলাদেশের জন্য এক অনন্য সুযোগ তৈরি করছে। তবে মান উন্নয়ন, গবেষণা, নকশা উদ্ভাবন এবং সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ছাড়া এ সম্ভাবনা কাজে লাগানো কঠিন হবে।