
প্রতিবেদক: দেশের প্রভাবশালী বাণিজ্য সংগঠনগুলোর আপত্তির মুখে নতুন বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা প্রজ্ঞাপন হওয়ার পাঁচ মাসের মধ্যেই আবার তা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে বিধিমালার ১০টি ধারার সংশোধন চূড়ান্ত করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংশোধনের অংশ হিসেবে কয়েকটি বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে—ফেডারেশন ও অন্যান্য সংগঠনে টানা দুই মেয়াদের পর বাধ্যতামূলক বিরতি নেওয়ার বিধান বাতিল, সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচনের পদ্ধতিতে আগের নিয়মে ফেরত যাওয়া, পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ ২৪ মাস থেকে শিথিল করা, সদস্যপদ গ্রহণ ও নবায়ন ফি কমানো ইত্যাদি। গত মাসে এসব প্রস্তাব নিয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের মতামত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
প্রায় তিন দশক পর গত মে মাসে নতুন বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা প্রজ্ঞাপন করা হয়। এটি ১৯৯৪ সালের বিধিমালাকে বাতিল করে কার্যকর করা হয়, আর তার আগের বিধি ছিল ১৯৮৫ সালের।
বিধিমালা জারির পর থেকেই এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ, এমসিসিআই, ডিসিসিআইসহ বিভিন্ন সংগঠন বেশ কিছু ধারা সংশোধনের দাবি জানায়। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু করে।
ব্যবসায়ী নেতারা জানান, বিধিমালার কিছু ধারা কার্যকর হলে এফবিসিসিআই ও ঢাকা চেম্বারসহ কয়েকটি বড় সংগঠনের নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।
বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান জানান, সংশোধনের বিষয়ে কয়েকটি বিষয়ে ইতিমধ্যে ঐক্যমত্য হয়েছে, খুব দ্রুতই তা চূড়ান্ত করা হবে।
নতুন বিধিমালায় বলা হয়েছিল, কোনো ব্যক্তি টানা দুই মেয়াদ নির্বাহী কমিটি বা পরিচালনা পর্ষদে থেকে থাকলে পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে একবার বিরতি নিতে হবে। এই নিয়ম ভবিষ্যৎ এবং অতীত সময়, উভয়ের জন্য প্রযোজ্য ধরা হয়। এর ফলে বহু সাবেক ও বর্তমান নেতা পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়েন। এ কারণে ব্যবসায়ীদের একাংশ ক্ষুব্ধ হয়, এবং তাদের চাপে এই বিধান বাতিলের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়।
বর্তমান বিধিতে বলা হয়েছে, সব বাণিজ্য সংগঠনের সভাপতি, সহসভাপতি এবং পরিচালক সরাসরি সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হবে। তবে সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ফেডারেশন ছাড়া অন্য সংগঠনগুলোতে সভাপতি, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও সহসভাপতি সরাসরি সদস্যদের ভোটে অথবা পরিচালনা পর্ষদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হতে পারবেন। আগেও এমনভাবেই নেতৃত্ব নির্বাচিত হতো।
বিদ্যমান বিধিমালায় নির্বাহী কমিটি বা পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ ২৪ মাস নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) দীর্ঘদিন ধরে তিন বছর মেয়াদি কমিটি পরিচালনা করে আসছে, যেখানে প্রতিবছর এক-তৃতীয়াংশ পরিচালক অবসর নেন। সংশোধনী প্রস্তাবে মেয়াদ ২৪ অথবা ৩৬ মাস করার বিষয়টি বিবেচনায় আছে।
নতুন বিধিমালায় সদস্য ফি ও নবায়ন ফি এক ধাপে ৪৩ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। এতে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হয় এবং সারা দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ফলে এই বিধানও সংশোধনের জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, ক শ্রেণির সংগঠনে সাধারণ সদস্য হওয়ার ফি ১৫ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫ হাজার টাকা এবং বার্ষিক চাঁদা ৫ হাজার থেকে কমিয়ে ২ হাজার টাকা করা হতে পারে। খ শ্রেণির সংগঠনে পূর্বের হার বহাল থাকবে। সহযোগী সদস্যদের ক্ষেত্রেও একই ফি প্রযোজ্য হতে পারে।
এফবিসিসিআই স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক সহসভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন বলেন, দ্রুত সংশোধনী প্রক্রিয়া শেষ হলে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন নির্বিঘ্ন হবে। তিনি জানান, তারা শুরু থেকেই সাংঘর্ষিক বিধান বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, কোম্পানি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধানগুলো চিহ্নিত করে সংশোধনের অনুরোধ করা হয়েছে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সে বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে। তবে অন্যান্য অংশীদারদের মতামতও বিবেচনা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।