
প্রতিবেদক: চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের শুরুটা রপ্তানি খাতে বেশ ইতিবাচক হয়েছে। বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বাংলাদেশ ৪৭৭ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা গত ২৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪.৯০ শতাংশ বেশি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তৈরি পোশাকের পাশাপাশি চামড়া, কৃষিপণ্য, হোম টেক্সটাইল, পাটজাত, প্রকৌশল, হিমায়িত খাদ্য ও প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানিও বেড়েছে।
রপ্তানির এই সাফল্যের পেছনে অন্যতম ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সাম্প্রতিক শুল্ক পরিবর্তন। গত চার মাস ধরে পাল্টা শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা চলছিল। তবে গত ৩১ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের ওপর শুল্কহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেন এবং শুল্ক কার্যকরের সময়সীমা ৭ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ান। এর ফলে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। অনেক পণ্য আগেভাগে জাহাজীকরণ করায় জুলাই মাসে রপ্তানিতে ইতিবাচক ধাক্কা আসে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি ইনামুল হক খান জানান, সাধারণত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে তুলনামূলক কম রপ্তানি হয়ে থাকে। তবে এবার মার্কিন বাজারে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই স্থগিত থাকা অনেক পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি, ভারতের ও চীনের তুলনায় বাংলাদেশের ওপর শুল্ক কম হওয়ায় মার্কিন ক্রেতারা বাংলাদেশের দিকেই ঝুঁকছেন, যা বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
খাতভিত্তিক রপ্তানির হিসাব বলছে, জুলাইয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৯৬ কোটি ডলারের, যা মোট রপ্তানির ৮৩ শতাংশ এবং আগের বছরের তুলনায় ২৪.৬৭ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, যার রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৭৪ লাখ ডলারে—প্রবৃদ্ধি ২৯.৬৫ শতাংশ। কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৯ কোটি ডলার, যা ১২.৮৬ শতাংশ বেশি। হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে ৬ কোটি ৮১ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি ১৩ শতাংশ।
এছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি ৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি ৪.৯২ শতাংশ। চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি ৫ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৪ শতাংশ বেশি। প্রকৌশল পণ্য রপ্তানি ৫ কোটি ৮২ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি ৭৪ শতাংশের বেশি। হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি ৪ কোটি ডলার, যা ৪২.৭১ শতাংশ বেশি।
সব মিলিয়ে রপ্তানি খাতে এই বছরের সূচনাকে ব্যবসায়ীদের জন্য আশাব্যঞ্জক মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইনামুল হক খান বলেন, “সব মিলিয়ে ব্যবসা মন্দ নয়। মার্কিন বাজারে ইতিবাচক বার্তা পাচ্ছি। চীন থেকে ক্রয়াদেশ স্থানান্তরের সম্ভাবনাও আছে।” তবে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে গ্যাস-বিদ্যুতের জোগান নিশ্চিত করা, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোসহ কিছু কাঠামোগত পদক্ষেপ জরুরি বলেও মত দিয়েছেন তিনি