পুলিশের জন্য ২০০টি নতুন গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত, ব্যয় ১৭২ কোটি টাকা

প্রতিবেদক: ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের বহু যানবাহন পুড়ে গেছে বা ভাঙচুরের ফলে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার নতুন করে পুলিশের জন্য ২০০টি ডাবল কেবিন পিকআপ (জিপ) কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিটি গাড়ির দাম ধরা হয়েছে ৮৬ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ব্যয় হবে ১৭২ কোটি টাকা।

এই ক্রয় প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে উন্মুক্ত দরপদ্ধতির বাইরে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ থেকেই এসব গাড়ি কেনা হবে। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এই প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।

বৈঠকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানান, পুলিশের অনেক গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এগুলো কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, ঢাকার আশপাশে পুলিশের জন্য হাউজিং কমপ্লেক্স নির্মাণের বিষয়েও চিন্তাভাবনা চলছে।

এর আগে, গত ২৯ এপ্রিল অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে গাড়ি কেনার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। জননিরাপত্তা বিভাগ জানিয়েছিল, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সহিংসতায় ৪৬০টি থানাসহ বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ হয়। এতে পুলিশের বিপুলসংখ্যক যানবাহন পুড়ে যায় এবং ধ্বংস হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সংঘর্ষের সময় মোট ১ হাজার ৫৯টি যানবাহন সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়। এর মধ্যে ৫২৬টি গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং ৫৩৩টি ভাঙচুর হয়। আর্থিকভাবে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা। পুলিশ সদর দপ্তর এই ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষিতে প্রথমে ৩৬০ কোটি টাকার গাড়ি কেনার প্রস্তাব পাঠায় জননিরাপত্তা বিভাগে।

পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৬৬৪টি থানা, ২১৫টি তদন্তকেন্দ্র, ৪৫৯টি ফাঁড়ি ও ১৬৭টি ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে মোট ৭২২টি নতুন গাড়ি প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে ৩৮টি জিপ, ২৫০টি ডাবল কেবিন পিকআপ, ৫৬টি সিঙ্গেল কেবিন পিকআপ, ২টি করে প্যাট্রল কার ও মাইক্রোবাস, ২টি অ্যাম্বুলেন্স, ২০টি ট্রাক, ২টি বাস, ১২টি প্রিজন ভ্যান, ২৮৫টি মোটরসাইকেল, ৮টি রেকার, ৪টি এপিসি ও ১টি জলকামান। পরে যাচাই–বাছাই করে গাড়ির সংখ্যা কিছুটা কমিয়ে আনা হয়।

গতকাল অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট থেকেই এই গাড়িগুলো কেনা হবে। যদিও ক্রয় কমিটির সভার পূর্ব নির্ধারিত আলোচ্যসূচিতে এ প্রস্তাব ছিল না, তবে ঈদের ছুটির আগে শেষ কার্যদিবসে হঠাৎ টেবিলে এটি উত্থাপন করা হয় এবং অনুমোদন পায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) ইনামুল হক সাগর বলেন, “পুলিশের অনেক গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এ দফায় ২০০টি গাড়ি কেনার অনুমোদন পাওয়া গেছে, যা পুলিশের অপারেশনাল সক্ষমতা বাড়াবে।” তবে বাকি যানবাহনগুলো কেনার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।