
অনলাইন ডেক্স: গত বছর পেঁয়াজের দাম বেশি থাকলেও এ বছরের চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলেও চাহিদা প্রত্যাশামতো বাড়েনি, যার ফলে দাম কমে যাওয়ার কারণে উৎপাদন খরচ ওঠার শঙ্কায় রয়েছেন পাবনা ও ফরিদপুরের চাষিরা, যেখানে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়।
পাবনার পুষ্পপারা পাইকারি হাটের ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, পাইকারি বাজারে সরবরাহ বেড়েছে, কিন্তু চাহিদা না বাড়ায় দাম প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে কমছে। তিনি জানান, গত সোমবার হাটে নতুন পেঁয়াজ এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হলেও, বৃহস্পতিবারের হাটে তা কমে ৮০০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা মণ হয়ে গেছে। স্থানীয় পাইকারি বাজারে সরবরাহ বাড়লেও চাহিদা না থাকায় দাম কমে যাচ্ছে।
পাবনার সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক মো. কামরুজ্জামান বলেন, গত বছর এক মন পেঁয়াজ আড়ই থেকে তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল, কিন্তু এবার নতুন পেঁয়াজের দাম অর্ধেকেরও কম।তিনি জানান, এ বছর ৮০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন, যার মধ্যে ৩০ বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন। তার মতে, প্রতি বিঘায় পেঁয়াজ চাষ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা, এবং লিজ নেওয়া জমিতে খরচ হয়েছে অর্ধ লক্ষাধিক টাকা। গড়ে এক কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ টাকা,বলেন তিনি।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আশিকুর রহমান জানান, এ বছর এক কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৩৮ টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পেঁয়াজের আবাদ গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর দেশে ২ লাখ ৯৩ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হলেও, এ বছর তা ৩ লাখ হেক্টর ছাড়িয়েছে।
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার খয়ার গ্রামের কৃষক মফিকুল ইসলাম জানান, “গত বছর পেঁয়াজ আবাদ করে এক লাখ টাকা লাভ হলেও এবার দাম এত কম যে উৎপাদন খরচও ওঠানো সম্ভব হচ্ছে না।” একই গ্রামের আরেক কৃষক মশিউর রহমান বলেন, “এ বছর কমপক্ষে ২ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারলে লাভ হবে।
এদিকে, অনেক কৃষক ঋণ নিয়ে বেশি পেঁয়াজ আবাদ করেছেন এবং এখন দাম কম থাকায় তারা চরম হতাশ। পাবনার সুজানগর উপজেলার উলাট গ্রামের কৃষক মন্টু খান জানান, “পেঁয়াজ চাষ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা, যার মধ্যে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। পেঁয়াজ এখন গলার কাঁটা হয়ে গেছে।”
পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে স্থানীয় পেঁয়াজের চাহিদা নেই। রবিউল ইসলাম বলেন, “প্রতি হাটে ১০ থেকে ১২ ট্রাক পেঁয়াজ ঢাকা, টাঙ্গাইল, গাজীপুরসহ আশেপাশের জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে, কিন্তু চট্টগ্রাম ও সিলেটের মোকামগুলোতে সরবরাহ করলে আরও বেশি বিক্রি হতো।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর পাবনায় ৫৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে, এবং প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. রোকনুজ্জামান বলেন, “দাম কমলেও কৃষকদের হতাশ হওয়ার কারণ নেই। এখন পেঁয়াজ তোলা হচ্ছে এবং বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। তবে, তাড়াহুড়ো না করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেন তিনি, কারণ মৌসুম শেষে দাম বাড়বে।