পোশাকশিল্পে গ্যাসসংকট, উৎপাদন ব্যাহত

প্রতিবেদক: দেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষ খাত তৈরি পোশাক ও বস্ত্রশিল্পে গ্যাসসংকট এখনো কাটেনি। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন শিল্পোদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকরা। দেশীয় গ্যাসের উত্তোলন ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকায় শিল্প–কারখানায় জ্বালানি ঘাটতি বাড়ছে। সংকট মোকাবিলায় সরকার অতিরিক্ত এলএনজি আমদানি শুরু করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

চার বছর আগেও দেশীয় কূপ থেকে দৈনিক গ্যাস উত্তোলন হতো ২৩০০–২৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট; বর্তমানে সেটি নেমে এসেছে ১৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটে। ফলে সিএনজি স্টেশন, বিদ্যুৎকেন্দ্র, আবাসিক খাতসহ সব জায়গায় গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। শিল্পোদ্যোক্তাদের অভিযোগ, গ্যাসের চাপ কম থাকায় পূর্ণ সক্ষমতায় কারখানা চালানো যাচ্ছে না। এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং কর্মসংস্থান স্থবির হয়ে পড়ছে।

পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪২০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। কিন্তু সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ২৮৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে দেশীয় কূপ থেকে আসছে ১৭৮৮ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আমদানিকৃত এলএনজি থেকে ১০৪২ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩৭০ মিলিয়ন ঘনফুট।

এই পরিস্থিতিতে গত বুধবার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। তিনি পোশাকশিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারের জরুরি পদক্ষেপ চান। বৈঠকে বিজিএমইএ পাঁচ দফা প্রস্তাব জমা দেয়—

নতুন গ্যাস সংযোগে শ্রমঘন পোশাক ও বস্ত্রশিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া, তিতাস গ্যাসের সংযোগ অনুমোদনের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা, সরঞ্জাম পরিবর্তন বা স্থানান্তরের আবেদনকারীদের জন্য আলাদা তালিকা তৈরি করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া।ছোট ও মাঝারি শিল্পের কম লোড বৃদ্ধির আবেদনকে অগ্রাধিকার দেওয়া, পাইপলাইনের শেষ প্রান্তের এলাকায় অন্তত ৩–৪ পিএসআই চাপ নিশ্চিত করা।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পর্যাপ্ত গ্যাস না থাকায় অনেক কারখানা পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন করতে পারছে না। এতে রপ্তানি ও অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখতে শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া জরুরি।

এ সময় সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকার পোশাকশিল্পকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বিজিএমইএর প্রস্তাব গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।

সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলোয় গ্যাস সংকট আরও তীব্র। গ্যাসচাপ প্রয়োজন ১২–১৫ পিএসআই হলেও বর্তমানে দিনে ২–৩ এবং রাতে ৫ পিএসআই মিলছে। ফলে কারখানাগুলো বাধ্য হয়ে ডিজেল ও পেট্রল ব্যবহার করে জেনারেটর ও ব্রয়লার চালাচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে এবং সময়মতো শিপমেন্ট ব্যাহত হচ্ছে।

পাকিজা গ্রুপের প্রশাসন বিভাগের ব্যবস্থাপক আল মোস্তাকিম বলেন, গ্যাস না থাকায় শ্রমিকরা বেকার বসে থাকে। এভাবে চলতে থাকলে কারখানা চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।

তবে তিতাস গ্যাসের সাভার জোনের ম্যানেজার আব্দুল্লাহ হাসান আল-মামুন দাবি করেছেন, আগের চেয়ে গ্যাস সরবরাহ বেড়েছে। অভিযোগও কমে এসেছে। শিগগিরই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।