পোশাকের ওপর ৮২% নির্ভরতা, রপ্তানির বৈচিত্র্যে অগ্রগতি নেই

প্রতিবেদক: বছরের পর বছর ধরে নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের রপ্তানিপণ্যের বৈচিত্র্য ও গন্তব্য বহুমুখীকরণের কথা বললেও বাস্তবে তেমন অগ্রগতি হয়নি। সরকারের উদার প্রণোদনা নীতি থাকা সত্ত্বেও রপ্তানি এখনো কয়েকটি নির্দিষ্ট পণ্য ও বাজারের ওপর নির্ভরশীল রয়ে গেছে।

বর্তমানে দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮২ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। আর মোট রপ্তানির দুই-তৃতীয়াংশের বেশি যায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রে। সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানির মধ্যে এই দুই অঞ্চলে রপ্তানি সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ৬২ শতাংশে, যা তিন বছর আগে ছিল ৬৫ শতাংশ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর শুধু ইইউ দেশগুলোতেই বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৪৪ শতাংশ। এর প্রধান কারণ হলো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা।

রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভলপমেন্টের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশ এখনো পোশাক খাতের ওপরই অত্যধিক নির্ভরশীল। প্রতিযোগিতামূলক নতুন পণ্যের সংখ্যা কম হওয়ায় নতুন বাজারে প্রবেশ কার্যত কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি মনে করেন, “পণ্যের বৈচিত্র্য না থাকলে বাজারের বৈচিত্র্যও টেকসইভাবে বাড়ানো সম্ভব নয়।”

অন্যদিকে, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রণোদনা নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার মতে, রপ্তানির বড় অংশ যেহেতু পোশাক থেকে আসে, তাই মোট প্রণোদনার দুই-তৃতীয়াংশ ওই খাতে চলে যাচ্ছে। অথচ প্রণোদনা হওয়া উচিত লক্ষ্যভিত্তিক, বাজারভিত্তিক ও প্রভাবভিত্তিক। তিনি বলেন, “প্রণোদনা সরাসরি বাজারের জন্য নয়, পুরো সরবরাহ চেইনের জন্য হওয়া উচিত।”

অর্থনীতিবিদ আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বড়, সংগঠিত এবং নির্ভরযোগ্য হওয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা সহজেই সেখানে অর্ডার পাচ্ছেন। তাই শুধু নীতি-প্রণোদনা দিয়ে রপ্তানি বাজার বদলানো সম্ভব হয়নি। পোশাক ছাড়া অন্য খাত বিদেশি মানদণ্ডে পিছিয়ে থাকায় সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে।

তিনি যোগ করেন, উচ্চ লজিস্টিক খরচ, জ্যাম, দুর্বল পরিবহন ব্যবস্থা, সার্টিফিকেশন ও পরীক্ষণের ঘাটতি, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির অভাব—এসব কারণে প্রতিযোগিতা ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।