প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগ-প্রসারণ নিরুৎসাহিত হওয়ার শঙ্কা: স্কয়ার টয়লেট্রিজের প্রধান নির্বাহী

প্রতিবেদক: ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, নতুন করে বিনিয়োগ বা ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহ জাগানোর মতো কার্যকরী পদক্ষেপ তুলনামূলকভাবে কম। বরং নতুন ব্যবসা উদ্যোগ নিতে গেলে খরচ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন স্কয়ার টয়লেট্রিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মালিক মোহাম্মদ সাঈদ। তিনি প্রথম আলোকে দেওয়া এক মন্তব্যে এসব উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন।

তিনি জানান, গত কয়েক দশকে যেসব স্থানীয় শিল্প আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে, সেগুলোর সুরক্ষায় এবারকার বাজেটে কোনো সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু খাতে কিছু সুবিধা দেওয়া হলেও, সামগ্রিকভাবে স্থানীয় শিল্প রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায়নি। উল্টো কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় শিল্পকে আন্তর্জাতিক আমদানি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে।

গত দুই-তিন বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ৫০ শতাংশের বেশি কমেছে, যার ফলে কাঁচামালের আমদানি খরচও সমপরিমাণ বেড়েছে। তবে সেই অনুযায়ী পণ্যের দাম বাড়ানো যায়নি, ফলে স্থানীয় শিল্পের মুনাফা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে শিল্পকে সুরক্ষিত রাখতে বাজেটে সমন্বিত নীতিমালা প্রয়োজন ছিল, কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। বরং কিছু ক্ষেত্রে উল্টো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা শিল্পকে আরও চাপে ফেলবে।

একটি উদাহরণ হিসেবে মালিক মোহাম্মদ সাঈদ উল্লেখ করেন, নারীদের প্রয়োজন বিবেচনায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বাজারজাত পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা দাম কমাতে ১–২ শতাংশ প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু একইসঙ্গে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির প্রধান কাঁচামালের ওপর আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে উৎপাদন খরচ ১০ শতাংশ বেড়ে যাবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে এই বাড়তি খরচ বহন করা কঠিন হবে, যার ফলে পণ্যের দাম কিছুটা হলেও বাড়বে। তাই তিনি মনে করেন, একদিকে ভ্যাট ছাড় দিয়ে সুবিধা দেওয়ার চেষ্টার বিপরীতে কাঁচামালে শুল্ক বাড়িয়ে যে বোঝা চাপানো হয়েছে, তাতে সমন্বয়হীনতার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, বাজেটে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য আগ্রহ জাগানোর মতো উৎসাহব্যঞ্জক কোনো পদক্ষেপ নেই। দেশে যে টয়লেট্রিজ ও কসমেটিকস শিল্প গড়ে উঠেছে, তার প্রায় ৮০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। ডলারের উচ্চমূল্য দীর্ঘদিন ধরে এই খাতকে চাপে রেখেছে। ফলে এই সময় এসব শিল্পের জন্য বিশেষ সুরক্ষা প্রয়োজন ছিল, কিন্তু তা বাজেটে অনুপস্থিত।

এ ছাড়া নির্মাণ খাতের বেশ কিছু উপকরণে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যেতে পারে। ফলে নতুন কারখানা স্থাপন বা পুরোনো ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিলে নির্মাণ খরচও বাড়বে। এটিও বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করবে বলে মনে করেন তিনি।