প্রাণ-আরএফএল বিনিয়োগে লিফট শিল্পে স্বদেশীয় শক্তি বৃদ্ধি ও রপ্তানি পরিকল্পনা

প্রতিবেদক: প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান প্রপার্টি লিফটস দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে আগামী বছরের মধ্যে লিফট রপ্তানির পরিকল্পনা করছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ববাজারে অন্যান্য ব্র্যান্ডের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাইছে প্রতিষ্ঠানটি। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য ইতিমধ্যে প্রপার্টি লিফটস লিফট উৎপাদনে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।

নরসিংদীর ডাঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে প্রপার্টি লিফটসের বিশাল কারখানায় সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, শ্রমিকরা দরজা তৈরি ও যন্ত্রাংশ সংযোজনের কাজে ব্যস্ত। কারখানাটি মাসে ২৬০ ইউনিট লিফট উৎপাদনের সক্ষমতা রাখে, বর্তমানে প্রায় ১২০টি লিফট তৈরি হচ্ছে এবং কিছু মাসের মধ্যে পূর্ণ ক্ষমতায় পৌঁছাবে। প্রতিষ্ঠানটি লিফটের ৭০–৮০ শতাংশ যন্ত্রাংশ দেশের মধ্যেই তৈরি করছে।

আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল বলেন, দেশে ক্রমবর্ধমান লিফট চাহিদা ও আমদানিকৃত লিফটের উচ্চমূল্য এবং পুরনো ভবনে কাস্টমাইজড লিফট স্থাপনের সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে তারা কারখানা স্থাপন করেছেন। প্রপার্টি লিফটস এ খাতে বছরে ১০–১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করছে।

চিফ অপারেটিং অফিসার মঈনুল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের সেরা লিফট ব্র্যান্ডের বাংলাদেশে পরিবেশক হিসেবেও কাজ করছে এবং লিফট উৎপাদনে ৪০ শতাংশের বেশি মূল্য সংযোজন করছে। কাঁচামালের একটি অংশ আমদানি হলেও ফেব্রিকেশন ও অন্যান্য কাজ ৮০ শতাংশ দেশেই সম্পন্ন করা হচ্ছে। উন্নত মানের মোটর, কন্ট্রোল প্যানেল, টেস্টিং ল্যাব ও অন্যান্য ফ্যাসিলিটিসের মাধ্যমে মান ও নিরাপত্তার দিক থেকে বিশ্বমানের লিফটের সঙ্গে প্রতিযোগিতা সম্ভব হচ্ছে।

বর্তমানে কারখানায় ২১০ জন কর্মী কাজ করছে এবং ইনস্টলেশন ও সার্ভিসিংয়ের জন্য এক হাজারের বেশি মানুষ যুক্ত। সারাদেশে নিরাপদ লিফট স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আরও পাঁচ হাজার কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।

দেশে বর্তমানে প্রপার্টি লিফটস ছাড়াও ওয়ালটন লিফট উৎপাদন করছে। দেশীয় লিফটের দাম আমদানিকৃত লিফটের তুলনায় ৫–৭ লাখ টাকা কম। তবে ব্যবহৃত লিফটের ৭০–৮০ শতাংশ এখনও আমদানির ওপর নির্ভর। দেশে লিফট বাজারের আকার বর্তমানে ১,২০০–১,৩০০ কোটি টাকা এবং বছরে ৪,৫০০–৫,০০০ ইউনিট বিক্রি হচ্ছে। ঢাকাসহ বড় শহরে চাহিদার ৪৫ শতাংশ এবং চট্টগ্রামে ২০ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশীয় কোম্পানির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়লে, সরকারের নীতি সহায়তা থাকলে, এবং বড় আকারে উৎপাদন চালু হলে দেশের লিফট বাজারের প্রবৃদ্ধি বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ হতে পারে। এতে দেশীয় কোম্পানি বৈশ্বিক বাজারেও শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারবে।