প্রিমিয়ার ব্যাংকে ডা. ইকবালের ২৫ বছর, পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক অনিয়ম

প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. এইচবিএম ইকবালের প্রিমিয়ার ব্যাংকের ত্রাসময় শাসনকাল এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে দৈনিক শেয়ার বিজে ৩ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের শেষ পর্ব প্রকাশিত হয়েছে।

ডা. ইকবাল দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ব্যাংকের পরিচালক এবং পরবর্তীতে চেয়ারম্যান পদে থেকে ব্যাংকটিকে প্রায় পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনা করেছেন। তার পরিবারের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেনে অতি মূল্যে পণ্য ও সেবা বিক্রি করে লাভবান হয়েছে। ইকবাল সেন্টার ও প্রিমিয়ার স্কয়ারের নিজের মালিকানাধীন ভবনে ব্যাংকের কার্যালয় রাখার মাধ্যমে উচ্চ হারে ভাড়া আদায় করে ব্যাংকের অর্থ শোষণ করা হয়েছে। এই আয় যথাযথভাবে করযোগ্য হলেও, আয়কর রিটার্নে তা প্রতিফলিত হয়নি।

ব্যাংক পরিচালনায় তার একক আধিপত্য থাকায় কর্মীদের ওপর শারীরিক এবং মানসিক চাপ তৈরি হতো। কর্মীদের অভিযোগ, ব্যাংকের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও ট্রেনিং ইকবালের মালিকানাধীন পাঁচ তারকা হোটেল বা রেস্টুরেন্টে আয়োজন করা হতো, যেখানে ব্যয় কমানো সম্ভব ছিল। এছাড়া তার রাজনৈতিক প্রভাব ও শেখ পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা আইনগত ব্যবস্থাপনায় তার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ইকবাল সেন্টারের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ৬০০ কোটি টাকারও বেশি অতিরিক্ত ভাড়া ও পরিষেবা চার্জ আদায় হয়েছে, যার ফলে আয়কর ও ভ্যাটের প্রায় ২০০ কোটি টাকার ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এই আচরণ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ভ্যাট ও কর সম্পর্কিত আইন অনুযায়ী অপরাধমূলক।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ডা. ইকবাল দেশ ছাড়েন। তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন নির্দেশনার পরও ব্যাংক তাকে তার জব্দ হিসাব থেকে টাকা তোলার সুযোগ দেয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে।

বর্তমানে প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে এবং নতুন নির্বাহী কমিটি ব্যাংকের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। ব্যাংকটির ভবিষ্যৎ উন্নয়নে আশা প্রকাশ করা হয়েছে যাতে অতীতের অনিয়ম আর না ঘটে।