
অনলাইন ডেক্স:দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও যথাযথ সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকার কারণে প্রতি বছর প্রায় ২০ শতাংশ ঘাটতি থাকে। এই ঘাটতি পূরণে ভারত ছিল প্রধান উৎস, তবে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক টানাপড়েনের কারণে ব্যবসায়ীরা বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে শুরু করেছেন। বর্তমানে পেঁয়াজের ৪৭ শতাংশ আমদানি পাকিস্তান থেকে হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বার্ষিক পেঁয়াজ চাহিদা প্রায় ৩৫ লাখ টন। তবে উৎপাদন, সংগ্রহ, বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণ পর্যায়ে প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়, যার ফলে দেশে বার্ষিক সরবরাহ দাঁড়ায় প্রায় ২৩-২৪ লাখ টন। ঘাটতি পূরণের জন্য ভারত থেকে আমদানি করা হয়, তবে ভারত-সংশ্লিষ্ট সমস্যা ও দাম বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ীরা বিকল্প উৎসের দিকে মনোযোগী হন।
গত ছয় মাসে ভারত ছাড়া আটটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, এর মধ্যে ৪৭ শতাংশই এসেছে পাকিস্তান থেকে। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান, মিসর, মিয়ানমার, চীন, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক ও থাইল্যান্ড থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তান থেকে সরবরাহ বাড়ানোর পেছনে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে পাকিস্তান, মিসর, চীন এবং থাইল্যান্ড থেকে ৬৭৭.২২ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। আগস্ট মাসে পাকিস্তান থেকে ৩,৩৪৩.৭৫ টন পেঁয়াজ আসে। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজের আমদানি বেড়ে যায়, তবে ডিসেম্বরে দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে আসার কারণে আমদানি অনেকটা কমে যায় এবং ৪০৬.৩০ টন পেঁয়াজ মিসর ও চীন থেকে আমদানি করা হয়।
চট্টগ্রামের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম বণিক বার্তাকে জানান, বাংলাদেশে আমদানি করা পেঁয়াজের ৯০ শতাংশই আসে ভারত থেকে। তবে, ভারত যখন রফতানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ বা রফতানিমূল্য বাড়ায়, তখন ব্যবসায়ীরা বিকল্প উৎস থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন নেন। এই বছর, পেঁয়াজের বাড়তি মূল্যের কারণে ব্যবসায়ীরা অন্তত আটটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছেন, যার মধ্যে পাকিস্তান থেকে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ এসেছে।
দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বর্তমানে দেশীয় পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে ভারতের অতিরিক্ত আমদানির ফলে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে গিয়েছিল, কিন্তু বর্তমানে দাম কিছুটা বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় পেঁয়াজ। অন্যদিকে, পাকিস্তান ও মিসর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স ইরা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানান, ভারতের সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান থাকায় পেঁয়াজ আমদানি সহজ। তবে, ভারতে রফতানিমূল্য বাড়ানো হলে বিকল্প দেশগুলো থেকে আমদানি বাড়বে। বর্তমানে দেশীয় পেঁয়াজের মৌসুম শুরু হওয়ায় ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি সীমিত হয়ে গেছে, এবং বাজারে পেঁয়াজের সংকট নেই।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, পেঁয়াজ পরিবহনে দ্রুত পচে যাওয়ার কারণে সীমান্তবর্তী দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের প্রতি ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বেশি। এক সময় ভারতের বিকল্প হিসেবে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হতো, তবে সেখানে গৃহযুদ্ধের কারণে এখন পাকিস্তান, মিসর ও অন্যান্য দেশের দিকে ঝুঁকছে ব্যবসায়ীরা। ভবিষ্যতে, ভারত থেকে আমদানি কমে গেলে বিকল্প দেশগুলো থেকে পেঁয়াজের আমদানি আরও বাড়তে পারে।