
প্রতিবেদক: পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সরকারের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করা এখন সময়ের দাবি। তাদের মতে, এটি শুধু মূলধন সংগ্রহের বিষয় নয়, বরং জনগণের স্বার্থেও এই তালিকাভুক্তি জরুরি। অন্যদিকে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তালিকাভুক্ত হলে তারা বাড়তি কোনো সুবিধা পান না। বিদ্যমান করহার বেশি, এবং তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়াও বেশ জটিল হওয়ায় তারা শেয়ারবাজারে আসতে আগ্রহী নন।
বুধবার ঢাকার নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনে ‘মিট অ্যান্ড গ্রিট, ডিসকাশন অন দ্য কারেন্ট স্টেট অব বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট’ শীর্ষক এক সভায় এসব বিষয় উঠে আসে। ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) এই সভার আয়োজন করে। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ, ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম, সিডিবিএলের চেয়ারম্যান তপন চৌধুরী, এফআইসিসিআই সভাপতি জাভেদ আখতার, এবং ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম।
ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মূলধন সংগ্রহের জন্য অন্য বিকল্প উৎস রয়েছে। ফলে তাদের জন্য শেয়ারবাজারে আসার তেমন বাস্তবতা নেই। বর্তমান করহার বহুজাতিকদের আকৃষ্ট করার মতো নয়, এবং কার্যকর করহার অনেক বেশি। তাছাড়া নীতিগত অনেক অসংগতি রয়েছে।
সিডিবিএল চেয়ারম্যান তপন চৌধুরী বলেন, “যদি কোম্পানির মূলধনের প্রয়োজন না থাকে, তবে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের যৌক্তিকতাও থাকে না।”
এই বক্তব্যের বিপরীতে আইসিবির চেয়ারম্যান আবু আহমেদ বলেন, শুধুমাত্র মূলধনের প্রয়োজন হলেই পুঁজিবাজারে আসতে হবে—এই ধারণা ঠিক নয়। অনেক দেশে জনস্বার্থে বহুজাতিক কোম্পানিগুলিকে বাজারে আসতে বাধ্য করা হয়। বাংলাদেশের একটি বহুজাতিক ব্যাংক মাত্র কয়েকটি শাখা নিয়ে বিপুল মুনাফা করলেও এখনও বাজারে তালিকাভুক্ত নয়। এতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বঞ্চিত হচ্ছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, “শুধু টাকার জন্য নয়, দায়বদ্ধতা থেকেও তাদের শেয়ারবাজারে আসা উচিত। কর আরোপ বা প্রশাসনিক চাপে নয়, আমরা চাই তারা স্বেচ্ছায় জনস্বার্থে বাজারে আসুক।”
ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, সুদের হার বেশি থাকায় বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার থেকে অর্থ তুলে ব্যাংকিং বা ট্রেজারি বন্ডে দিচ্ছেন। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা না থাকায় বাজারে আস্থার অভাব দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ব্যাংকনির্ভর দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নকে শেয়ারবাজারমুখী করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির যৌথ টাস্কফোর্স গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বন্ড নীতিমালা ও ঋণাত্মক ইকুইটির ক্ষেত্রেও সংস্কার হবে।
প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, শেয়ারবাজারে ঋণাত্মক ঋণের সমস্যা সমাধানে বন্ডে রূপান্তরের পরামর্শ এসেছে, যেটি যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে।