বাংলাদেশকে নিষেধাজ্ঞা মানতে চাপ যুক্তরাষ্ট্রের, আপত্তি জানিয়েছে ঢাকা

প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ইস্যুতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় দফার আলোচনা শেষ হয়েছে। তবে সব বিষয়ে পুরোপুরি সমঝোতা হয়নি। তিন দিনের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ওয়াশিংটন ডিসিতে। আলোচনায় অংশ নেয়া প্রতিনিধি দলে ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনীন চৌধুরী। তারা শনিবার ঢাকায় ফেরেন। আলোচনায় দুই দেশ বেশ কিছু বিষয়ে একমত হলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্তে মতপার্থক্য রয়ে গেছে।

বাণিজ্য সচিব জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত বিষয়ের ৮০ শতাংশে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। তবে কিছু স্পর্শকাতর শর্তে সম্মতি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে অন্যতম হলো—যদি যুক্তরাষ্ট্র কোনো দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাহলে বাংলাদেশকেও সেই নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে হবে। এ ছাড়া, মার্কিন পণ্য যেগুলো বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত করবে, সেগুলো অন্য কোনো দেশকে না দেওয়ার শর্তও দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের স্বার্থে বাংলাদেশ এসব শর্ত মানতে অস্বীকৃতি জানায়।

আলোচনায় আরেকটি দ্বন্দ্বের জায়গা ছিল চীনের ওপর নির্ভরতা। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে চীনের ওপর আমদানিনির্ভরতা কমাতে বলেছে। বিশেষ করে পোশাক খাতের কাঁচামাল আমদানির বিষয়ে বিকল্প খোঁজার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মার্কিন বাজারে প্রবেশের জন্য ৪০ শতাংশ স্থানীয় মূল্য সংযোজনের শর্তও বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু শর্ত অযৌক্তিক। বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, যদি ভিয়েতনামও চীন থেকে বিপুল পরিমাণে কাঁচামাল আমদানি করে, তাহলে তাদের ক্ষেত্রে এমন শর্ত শিথিল কেন? তাদের জন্য শুল্ক ২০ শতাংশ রাখা হয়েছে, অথচ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এই দরকষাকষিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সমন্বিত ও গবেষণাভিত্তিক প্রস্তুতি ছিল না। শুধু আমলাদের নিয়ে আলোচনায় গেলে সফলতা পাওয়া কঠিন। তিনি মনে করেন, বাণিজ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করা হলে প্রস্তুতি আরও দৃঢ় হতো।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও আলোচনার প্রস্তুতিতে কিছু দুর্বলতা স্বীকার করেছেন। তবে তারা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রও আলোচনায় যথেষ্ট সহযোগিতা করেনি।

এই পরিস্থিতিতে আগামী ১ আগস্টের আগেই আরও এক দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। তা ভার্চুয়ালি অথবা সরাসরি হতে পারে। উভয় পক্ষই আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনার মাধ্যমে প্রস্তুতি জোরদার করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।