
প্রতিবেদক: বিশ্বব্যাংক আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে আরও ৩০ লাখ মানুষ অতি দরিদ্র হয়ে পড়বে। এর ফলে অতি দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছাবে, যা ২০২৩ সালে ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। একই সঙ্গে জাতীয় দারিদ্র্য হারও বাড়বে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২৩ সালে জাতীয় দারিদ্র্য হার ছিল ২০ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২০২৫ সালে বেড়ে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে।
এই বাড়তি দারিদ্র্যের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রকৃত আয় হ্রাস, শ্রমবাজারের দুর্বল অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের শ্লথগতি। মূল্যস্ফীতির হার দীর্ঘ সময় ধরে ১০ শতাংশের বেশি থাকলেও, মজুরি বৃদ্ধির হার তার তুলনায় কম হওয়ায় সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। ২০২৫ সালের মার্চে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ, কিন্তু মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। এই বৈষম্যের ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে এবং অনেকেই দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যরেখা অনুযায়ী, দিনে ২ দশমিক ১৫ ডলারের কম আয় করলে একজন ব্যক্তি অতি দরিদ্র হিসেবে বিবেচিত হন। বাংলাদেশের নিজস্ব দারিদ্র্যসীমা অনুযায়ী, মাসে গড়ে ৩ হাজার ৮২২ টাকার কম ব্যয়ে যদি কোনো ব্যক্তি খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণে অক্ষম হন, তাহলে তাকে গরিব হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দারিদ্র্য পরিমাপে ১১৯টি সূচক বিবেচনায় নেয়।
বিশ্লেষকদের মতে, দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, রাজস্ব ঘাটতি, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের ধীরগতি এবং বিনিয়োগ কমে যাওয়া অর্থনীতির শ্লথগতির মূল কারণ। বেসরকারি খাতে নতুন বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগও সীমিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া দেশের ৮৬ শতাংশের বেশি কর্মসংস্থান এখনো অনানুষ্ঠানিক খাতে, যেখানে চাকরির নিশ্চয়তা নেই এবং আয়ও অস্থির।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম জোরদার করা এবং শ্রমবাজারকে শক্তিশালী করাই এখন সময়ের দাবি। তা না হলে ভবিষ্যতে দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে।