
প্রতিবেদক: চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রে ২২২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ২৭ হাজার ৮৪ কোটি টাকার সমান। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোশাক আমদানিকারক শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি, যা দেশের রপ্তানিখাতে একটি বড় ইতিবাচক দিক।
এদিকে, অনেকদিন পর যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোশাক বাজারে বড় পরিবর্তন দেখা গেছে। চীনকে টপকে শীর্ষ অবস্থান দখল করেছে ভিয়েতনাম। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রে ৩৮৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। একই সময়ে চীন রপ্তানি করেছে ৩৬০ কোটি ডলারের পোশাক, প্রবৃদ্ধি মাত্র ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভিয়েতনাম এখন নতুন শীর্ষ রপ্তানিকারক।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক তথ্য বিশ্লেষণ সংস্থা ‘অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস এর হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে মোট ২ হাজার ৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি হয়েছে। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি। তবে এপ্রিলের শুরুতেই পরিস্থিতিতে মোড় নেয়। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৫৭টি দেশের ওপর ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। ৯ এপ্রিল সিদ্ধান্তটি তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হলেও, ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর থাকে।
শুল্কনীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চীন। তাদের পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্কহার দাঁড়িয়েছে ১৪৫ শতাংশে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তবে শুল্ক জটিলতার আগেই ভিয়েতনাম চীনকে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে আসে।
বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাক রপ্তানি বাজার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের মোট রপ্তানির ১৭ শতাংশ গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। এর মধ্যে ৮৭ শতাংশই ছিল তৈরি পোশাক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যেখানে মাসিক গড় ছিল ৬১ কোটি ডলার। চলতি বছরে সেই গড় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ কোটি ডলারে, যা প্রবৃদ্ধির স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়।
অন্যান্য দেশের পারফরম্যান্স পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ভারতের রপ্তানি হয়েছে ১৫১ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি ২৪ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি করেছে ১২৩ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ। কম্বোডিয়ার রপ্তানি ৯৩ কোটি ডলার, বেড়েছে ১৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। পাকিস্তান ৫৫ কোটি ডলারের রপ্তানি করে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। মেক্সিকো ও কোরিয়ার প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ২ শতাংশ করে হলেও হন্ডুরাসের রপ্তানি কমেছে ১০ শতাংশ।
সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক। তবে বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন ও শুল্কচাপ ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। এর মধ্যেও বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা ধরে রাখা এবং বাজার বৈচিত্র্য বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে।