
প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মনে করে, চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়াবে। সংস্থাটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ সময়ে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার আগের বছরের তুলনায় বাড়বে এবং মূল্যস্ফীতি কমবে।
আইএমএফ জানিয়েছে, চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে অন্তর্বর্তী সরকার এ বছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভা উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরে বৈশ্বিক গড় প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ২ শতাংশ।
গত জুনে আইএমএফ বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল। তবে তিন মাসের ব্যবধানে হালনাগাদ পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে। যদিও এর কারণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০৩০ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার পৌঁছাতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা বেড়েছে। এ মাসে আমদানি বেড়েছে ১৯ শতাংশের বেশি, আর রপ্তানি বেড়েছে ২৭ শতাংশ। তবে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে।
বিশ্বব্যাংক গত ৭ অক্টোবর জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এ ছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।
এদিকে আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি হার হবে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরে ছিল ১০ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে আইএমএফের পূর্বাভাস বাস্তবসম্মত। তাঁর মতে, প্রবৃদ্ধি বাড়ানো ও মূল্যস্ফীতি কমানো—দুটিই চ্যালেঞ্জিং। তিনি বলেন, ‘প্রবাসী আয়ের প্রবাহ ধরে রাখা, রপ্তানি বৃদ্ধি, বিনিয়োগ বাড়ানো—এসব না হলে কীভাবে ওই প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে? ব্যাংক খাতের সংকট সাময়িকভাবে কমলেও সমাধান এখনো পরিষ্কার নয়।
চলতি অর্থবছরে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়িয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটি জুলাই মাসে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিলেও সর্বশেষ প্রতিবেদনে তা দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশে। এর আগে এপ্রিলের পূর্বাভাস ছিল ২ দশমিক ৮ শতাংশ।
এই প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির অর্থ হলো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ধীরে ধীরে ইতিবাচক গতি ফিরছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি বড় অর্থনীতির মধ্যে নতুন বাণিজ্যচুক্তি হয়েছে, যা শুল্কসংক্রান্ত নেতিবাচক প্রভাব কমাতে সহায়ক হয়েছে। আইএমএফ ২০২৬ সালের জন্য বৈশ্বিক জিডিপিতে ৩ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।
তাদের ধারণা, চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং প্রধান অর্থনীতিগুলোর স্থিতিশীল আর্থিক নীতি অব্যাহত থাকবে। তবে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও বাণিজ্য উত্তেজনা এখনো বড় ঝুঁকি হিসেবে রয়েছে।