
প্রতিবেদক: বিশ্বখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডি সাধারণত বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য পরিচিত হলেও এবার বাংলাদেশে তারা এনেছে একটি প্লাগ-ইন হাইব্রিড এসইউভি। দেশের বাজারে ‘সিলায়ন-৬’ মডেলের এ গাড়িটি নিয়ে এসেছে সিজি রানার বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত বিওয়াইডি ফ্ল্যাগশিপ বিক্রয়কেন্দ্র থেকে শুরু হয়ে মাওয়া পর্যন্ত ‘বিওয়াইডি মিডিয়া ড্রাইভ’ নামের এক দিনব্যাপী আয়োজনের মাধ্যমে গাড়িটির কার্যক্ষমতা, প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয় আমন্ত্রিত সাংবাদিক ও অতিথিদের সামনে। প্রায় ৪৫ কিলোমিটারের এই রোড ট্রিপে মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের মসৃণ পথ হয়ে ওঠে সিলায়ন-৬-এর শক্তি, গতি ও আরামদায়ক ড্রাইভিংয়ের আদর্শ পরীক্ষাক্ষেত্র।
সকাল সাড়ে ৮টায় বিওয়াইডি শোরুমে সকালের নাশতা ও আড্ডার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনব্যাপী কর্মসূচি। এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় মাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা। প্রায় তিন ঘণ্টার এই ড্রাইভে অংশ নিয়ে অতিথিরা জানান, গাড়িটির আরাম, প্রযুক্তি ও পারফরম্যান্স ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
‘সিলায়ন-৬’ মূলত একটি প্লাগ-ইন হাইব্রিড এসইউভি, যেখানে রয়েছে ডিএমআই প্লাগ-ইন হাইব্রিড প্রযুক্তির অকটেনচালিত ইঞ্জিন এবং শক্তিশালী ইলেকট্রিক মোটর। গাড়িটি শূন্য থেকে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতি তুলতে সময় নেয় মাত্র ৮.৫ সেকেন্ড।
গাড়িটির নকশা করা হয়েছে বিওয়াইডির ‘ওসেন অ্যাসথেটিকস’ ধারণা অনুযায়ী, যার কারণে নামকরণ করা হয়েছে সামুদ্রিক প্রাণী ‘সিলায়ন’-এর নামে। সামনে বড় ফ্রন্ট গ্রিল, এলইডি হেডলাইট ও স্কাল্পটেড বডি ডিজাইন গাড়িটিকে দিয়েছে স্পোর্টি ও প্রিমিয়াম লুক।
গাড়িটির ওজন ১,৯৪০ কেজি এবং গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ৭ ইঞ্চি—যা শহরের রাস্তাসহ হাইওয়ে ও অফ-রোড যাত্রার জন্য উপযোগী। ভ্রমণের সময় এটির ঝাঁকুনিমুক্ত চালনার অভিজ্ঞতা প্রশংসা কুড়িয়েছে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে।
সিলায়ন-৬-এ রয়েছে আধুনিক অ্যাডভান্সড ড্রাইভার অ্যাসিস্ট্যান্স সিস্টেম (ADAS), যাতে আছে লেন কিপ অ্যাসিস্ট, অ্যাডাপ্টিভ ক্রুজ কন্ট্রোল এবং অটোনোমাস ইমার্জেন্সি ব্রেকিং। নিরাপত্তার দিক থেকে রয়েছে ৬টি এয়ারব্যাগ এবং ১০টি ক্যামেরার সমন্বয়ে তৈরি ৩৬০ ডিগ্রির এইচডি ক্যামেরা ব্যবস্থা।
গাড়িটির ইন্টেরিয়রে রয়েছে ১৫.৬ ইঞ্চির টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে, ইনফিনিটি ব্র্যান্ডের ১০টি স্পিকার, মাল্টি-জোন ক্লাইমেট কন্ট্রোল এবং সিনথেটিক লেদার সিট। প্যানারোমিক সানরুফের মাধ্যমে খোলা আকাশ উপভোগ করার সুবিধা থাকছে, যা দীর্ঘ ভ্রমণে বাড়তি স্বস্তি এনে দেয়।
গাড়িটি ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়—যেমন জানালা, এসি কিংবা সানরুফ খোলা বা বন্ধ করা যায় কেবল কণ্ঠ নির্দেশনায়।
সামনে মোবাইলের জন্য রয়েছে ওয়্যারলেস চার্জিং সুবিধা। ইউএসবি ও টাইপ সি চার্জিং পোর্ট রয়েছে সামনে ও পেছনে উভয় পাশে। এমনকি গাড়ির চাবি না থাকলেও এনএফসি কার্ড ব্যবহার করে গাড়ি চালানো সম্ভব।
একবার পূর্ণ চার্জ ও জ্বালানির ট্যাংক ভরে চালানো যাবে সর্বোচ্চ ১,০৯২ কিলোমিটার। ব্যাটারিতে চালালে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হবে ৩ টাকারও কম। জ্বালানি ও চার্জ উভয় মিলিয়ে খরচ দাঁড়াবে ৪ টাকা ১২ পয়সা।
বিওয়াইডি সিলায়ন-৬ পাওয়া যাচ্ছে চারটি রঙে: হারবার গ্রে, স্টোন গ্রে, আর্কটিক হোয়াইট ও ডিলান ব্ল্যাক। প্রথম ২০০ জন ক্রেতার জন্য গাড়িটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। পাশাপাশি, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থায়নের সুবিধা থাকছে।
গাড়িটির ব্যাটারি ও ড্রাইভ ইউনিটের জন্য রয়েছে ৮ বছরের এবং অন্যান্য প্রধান যন্ত্রাংশের জন্য ৬ বছরের ওয়ারেন্টি।
বিওয়াইডি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক চার্লস রেন বলেন, “সিলায়ন-৬ একটি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর গাড়ি। এর শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ভবিষ্যতের স্মার্ট যানবাহনের মানদণ্ড তৈরি করবে। আমাদের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশি ক্রেতাদের জন্য আরও উন্নত ও সাশ্রয়ী গাড়ি বাজারে আনা।”