
প্রতিবেদক: বাংলাদেশের কৃষক ধীরে ধীরে ভুট্টা, আলু ও অন্যান্য উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে। এর ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গমের আবাদ ও উৎপাদন পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত শীত মৌসুমে ২ লাখ ৮ হাজার হেক্টর জমিতে ১০ লাখ ৪১ হাজার টন গম ঘরে তুলেছেন কৃষক। টানা দ্বিতীয় বছরের মতো আবাদ কমার পেছনে কৃষকের লাভজনক ফসলের প্রতি আগ্রহ প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
গম আবাদ কমার কারণ হিসেবে কৃষিবিদরা শীতকালীন ভুট্টা, আলু ও অন্যান্য সবজির তুলনায় গমের কম লাভ, উন্নত জাতের অভাব, ২০১৬ সালে গম ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব এবং শীত মৌসুমের ছোট হওয়া উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিডব্লিউএমআরআই) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুহাম্মদ রেজাউল কবীর বলেন, ভুট্টা প্রায় নগদ ফসলে পরিণত হয়েছে। আগে যেসব জমিতে গম চাষ হতো, এখন সেখানে ভুট্টা হচ্ছে।কৃষি-বিজ্ঞানীরা জানান, প্রতি হেক্টরে ভুট্টার ফলন ১১-১২ টন, যা গমের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি। এছাড়া পোল্ট্রি, মাছ ও গবাদিপশুর খাদ্যের চাহিদার কারণে কৃষক ভুট্টার ভালো দাম পান।
আন্তর্জাতিক দিক থেকেও গমের উৎপাদন প্রভাবিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, শীতকাল ছোট হচ্ছে এবং তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে বেড়ে যাওয়ায় গমের ফলন কমে যাচ্ছে। গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক একেএম আমিনুল ইসলাম বলেন, ডিসেম্বরে গম আবাদ করার পর ফুল ধরার সময় তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ফলন কমে যায়, ফলে কৃষক আর লাভ করতে পারে না।” এছাড়া গম ব্লাস্ট রোগও উৎপাদন কমার অন্যতম কারণ।
উন্নত জাতের গমের আবাদ কিছুটা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারে। বিডব্লিউএমআরআই ব্লাস্ট-প্রতিরোধী বারি গম-৩৩ এবং বারি গম-৩২ জাত উদ্ভাবন করেছে, যা কৃষকের মধ্যে জনপ্রিয়। একই সঙ্গে গম-৫ ও হাইব্রিড জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে। তবে দামের অনিশ্চয়তা এবং আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কম মূল্যের আমদানি স্থানীয় গমের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৭৫ লাখ টন গমের প্রয়োজন হয়, যার অধিকাংশই আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়।
তবুও গম চাষে সম্ভাবনা এখনো আছে। সম্প্রতি ভুট্টায় রোগের প্রভাব দেখা দিচ্ছে এবং মাটির পুষ্টি কমে যাচ্ছে। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায় পানির সংকট থাকা সত্ত্বেও গম চাষ বাড়ছে। বিশেষ লবণসহনশীল জাত (বিডব্লিউএমআরআই গম-৪) এক হেক্টরে সাড়ে ৫ টন ফলন দিতে সক্ষম। যদি দক্ষিণাঞ্চলের ২ লাখ হেক্টর জমি গমের আওতায় আনা যায়, তবে মোট উৎপাদন ২০ লাখ টনে পৌঁছানো সম্ভব বলে জানান বিডব্লিউএমআরআইয়ের পরিচালক আব্দুল হাকিম।