বাংলাদেশে বিস্কুট শিল্পের বাজার

প্রতিবেদক: বাংলাদেশে বিস্কুট একটি জনপ্রিয় খাদ্যপণ্য হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই বাজার ধরে রেখেছে। ক্রমবর্ধমান আয়, নগরায়ণ এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের কারণে বিস্কুটের চাহিদা দুই দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলেছে। প্রতিবছর এ খাতে ১০–১২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে এবং ২০২০–২১ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধির হার ২০–২৫ শতাংশে পৌঁছেছিল। বিস্কুট শিল্পের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৮০ থেকে ৯০ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার সমান।

বাংলাদেশে বিস্কুটের বাৎসরিক উৎপাদন প্রায় ২ লাখ টন, যার প্রায় ৮০ শতাংশই স্বয়ংক্রিয় কারখানায় তৈরি হয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ১০০টি স্বয়ংক্রিয় বিস্কুট কারখানা এবং প্রায় ৪,৫০০টি বেকারি বিস্কুট উৎপাদন ও বিপণনে নিয়োজিত রয়েছে। বিস্কুটের স্থানীয় চাহিদার ৯৭–৯৮ শতাংশই দেশীয় প্রতিষ্ঠান দ্বারা পূরণ হচ্ছে। ২০২১ সালের হিসাবে মাথাপিছু বার্ষিক বিস্কুট ভোগ ২.৮ কেজি, যা দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় সর্বোচ্চ।

দেশের শীর্ষস্থানীয় বিস্কুট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, রিদিশা ফুডস, প্রাণ ফুডস, হক ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ, বেঙ্গল বিস্কুট, ড্যান কেক বাংলাদেশ, ফ্রেশ বিস্কুট (এমজিআই গ্রুপ), বেকম্যান’স (আকিজ গ্রুপ) প্রভৃতি। বাজারে অলিম্পিক, হক, নাবিস্কো, ড্যানিশ, রোমানিয়া, কোকোলা, কিষোয়ান, ওয়েল ফুড, ইস্পাহানি ইত্যাদি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের বিস্কুট পাওয়া যায়। এসব বিস্কুটে ব্যবহৃত হয় চকলেট, নারকেল, বাদাম, চিজসহ নানা ধরনের উপকরণ। ক্লাসিক টি বিস্কুট থেকে শুরু করে ক্রিম স্যান্ডউইচ, ওয়েফার ও টোস্ট বিস্কুটের চাহিদা রয়েছে সব শ্রেণির ক্রেতার কাছে।

বাংলাদেশে বিস্কুট শিল্পের রয়েছে ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে ব্যারিস্টার তমিজুল হক ঢাকার তেজগাঁওয়ে হক বিস্কুট কারখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের আধুনিক বিস্কুট শিল্পের সূচনা করেন। স্বাধীনতার আগে থেকেই নাবিস্কো বিস্কুট উৎপাদন করে আসছে। ১৯৭০-এর দশকে মাসাফি, আজাদ, অলিম্পিকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বিস্কুট তৈরি শুরু করে, যা আজ দেশের বিস্কুট বাজারে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দখল করে আছে।

বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএবিবিএমএ)-এর তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে বিস্কুট উৎপাদনে সক্রিয় রয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে প্রায় ১০০টি প্রতিষ্ঠানে স্বয়ংক্রিয় কারখানা রয়েছে। বড় আকারের কারখানা ৩৫টির মতো, ৫০টি মাঝারি আকারের এবং বৃহৎ শিল্প হিসেবে বিবেচিত কারখানা রয়েছে ১৫টি।

বাংলাদেশে বিস্কুট শিল্প শুধু অভ্যন্তরীণ বাজারে নয়, রপ্তানিতেও সম্ভাবনাময় একটি খাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।