বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে দুই ভাগ করার সুপারিশ করছে সরকার,কতটা লাভজনক হবে

অনলাইন ডেক্স: রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে দুই ভাগ করার সুপারিশ করেছে সরকারের অর্থনৈতিক কৌশল পুনঃনির্ধারণে গঠিত টাস্কফোর্স। তবে এই সুপারিশ বাস্তবায়নে এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এমনকি এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনাও হয়নি।

৩ ফেব্রুয়ারি টাস্কফোর্সের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, আধুনিক অ্যাভিয়েশনের মানদণ্ডে বাংলাদেশ বিমান এখনও পিছিয়ে আছে। পরিষেবার মান দুর্বল এবং এটি মূলত অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল। তাই বিমানকে দুই ভাগ করে নতুন একটি এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়েছে, যার নাম হবে বাংলাদেশ এয়ারওয়েজ। এটি বিদ্যমান সম্পদের অর্ধেক ব্যবহার করবে এবং পরিচালিত হবে স্বাধীন ও বিশ্বমানের একটি ব্যবস্থাপনা সংস্থার মাধ্যমে।

প্রতিবেদন প্রকাশের সময় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে অন্তত একটি সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে বাংলাদেশ বিমানের সংস্কার নিয়ে এখনো কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিমান) মো. সফিউল আলম বলেন, ‘টাস্কফোর্সের সুপারিশের বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা আসেনি, তাই মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।’

তবে মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘সুপারিশ বাস্তবায়নের পক্ষে-বিপক্ষে শক্তিশালী মতামত রয়েছে। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরও আলোচনা প্রয়োজন।

অর্থনৈতিক কৌশল পুনঃনির্ধারণে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রধান ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ বলেন, ‘দীর্ঘদিনের চেষ্টার পরও বিমানের সংস্কার সম্ভব হয়নি। এখন শুধু সংস্কার করলেই কাজ হবে না, এ জন্য বিমানকে ভাগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রথমে বিমান বন্ধ করে নতুন প্রতিষ্ঠান গঠনের কথা ভেবেছিলাম, তবে সেটি বাস্তবায়ন করা কঠিন। তাই দ্বিতীয় বিকল্প হিসেবে বিমানকে দুই ভাগ করার পরিকল্পনা এসেছে। নতুন প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পেশাদার কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত হবে এবং বিমানের সম্পদ শেয়ার করা হবে। উভয় প্রতিষ্ঠান লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে কাজ করবে, যার পারফরম্যান্স ভালো হবে, সেটি এগিয়ে যাবে।’

তার মতে, এই পরিকল্পনা লাভজনক ও টেকসই হবে। এখনই আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিলে দুটি উপকার পাওয়া যাবে—
১. কিছু কাজ এগিয়ে থাকবে, যা পরবর্তী নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করতে পারবে।
2. নতুন উদ্যোগের ফলে বিমানের ওপর প্রতিযোগিতামূলক চাপ তৈরি হবে, যা পরিষেবার মানোন্নয়নে সহায়ক হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত,বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘৫৪ বছরের পুরোনো বিমান এখনো আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যা একটি বাণিজ্যিক সংস্থার জন্য অকার্যকর। বিমানের লাভজনক করতে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগও সফল হয়নি। টাস্কফোর্সের সুপারিশ অত্যন্ত বাস্তবসম্মত, আমাদের এটি সমর্থন করা উচিত।’

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রমালিকানায় একাধিক এয়ারলাইনস পরিচালিত হচ্ছে। যেমন—ভারত এয়ার ইন্ডিয়া ও এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস।সংযুক্ত আরব আমিরাত এমিরেটস ও ফ্লাই দুবাই।সিঙ্গাপুর সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস ও স্কুট এয়ারলাইনস।মালয়েশিয়া মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস ও এয়ার এশিয়া

বাংলাদেশের অ্যাভিয়েশন খাতের ৭৫ শতাংশ বাজার বিদেশি উড়োজাহাজ কোম্পানিগুলোর দখলে, যা দেশীয় এয়ারলাইনসের জন্য প্রতিযোগিতামূলক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে দ্বিতীয় একটি রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইনস চালু করা হলে সেটিকে বাজেট ক্যারিয়ার (সাশ্রয়ী ভাড়ায়) হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বিশ্বব্যাপী বাজেট ক্যারিয়ার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, কারণ এটি কম খরচে ভ্রমণের সুযোগ দেয়।

বাংলাদেশ থেকে যাঁরা বিদেশে যান, তাঁদের ৭০-৮০ শতাংশই প্রবাসী শ্রমিক। তাঁরা স্বাভাবিকভাবে কম ভাড়ার এয়ারলাইনস পছন্দ করেন। ফলে বিদেশি বাজেট ক্যারিয়ারগুলো বাংলাদেশে ভালো ব্যবসা করছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যাত্রীসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, যা বাংলাদেশের এয়ারলাইনস শিল্পের জন্য বড় সুযোগ। ২০৩৪ সালে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিতব্য ফিফা বিশ্বকাপের আগে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক সেখানে যাবেন। এ কারণে এখনই বিমানকে ভাগ করে একটি নতুন রাষ্ট্রীয় বাজেট ক্যারিয়ার চালু করার উপযুক্ত সময়।