বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে পরিচালক হস্তক্ষেপে এমডি পদত্যাগ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত ও সুপারিশ

প্রতিবেদক: নানা অনিয়ম ও তীব্র তারল্য সংকটে থাকা বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংককে স্থিতিশীল করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে। তবে নতুন পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যক্রমে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে। বিশেষত চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মহসিন মিয়া ব্যাংকের নিয়মিত ঋণ কার্যক্রম, নিয়োগ, বদলি, শাস্তি– সবকিছুতে তৎপরভাবে হস্তক্ষেপ করছেন। এমডি মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন এ হস্তক্ষেপে আপত্তি জানালে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।

সরকার পরিবর্তনের পর গত বছরের সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে। সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্বাহী পরিচালক আতাউর রহমানকে চেয়ারম্যান এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি মহসিন মিয়াকে নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়। নতুন পাঁচ সদস্যের পর্ষদে অডিট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে শেখ আশ্বাফুজ্জামান এফসিএকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ব্যাংকের এমডি পদত্যাগের পেছনে মূল কারণ হিসেবে সুরুজ মিয়া স্পিনিংয়ের ৮৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের বিপরীতে ৪৮ কোটি টাকার সুদ মওকুফে আপত্তি করা ছিল।

পরিদর্শন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান প্রায় প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অফিসে উপস্থিত থেকে কর্মীদের ডেকে নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন। ঋণ আদায়, সুদ মওকুফ, নিয়োগ, বদলি, শাস্তিসহ সব বিষয়ে তারা হস্তক্ষেপ করছেন। এমডি এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের কাজের ওপর সরাসরি প্রভাব তৈরি করা হচ্ছে। এমনকি এমডিকে শাখা পরিদর্শন বা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দল সুপারিশ করেছে, চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যানকে জনস্বার্থে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা, সাময়িকভাবে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ এবং পর্যবেক্ষক স্থাপন করা। এছাড়া এমডির পদত্যাগপত্র নামঞ্জুর করে তাঁকে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

চেয়ারম্যান আতাউর রহমান এ অভিযোগকে অস্বীকার করে বলেছেন, ব্যাংকের দৈনন্দিন কাজে হস্তক্ষেপ করছেন না এবং শোবার ঘর নিয়ে অভিযোগও সত্য নয়। তিনি দাবি করেছেন, যে রুমটি বানানো হয়েছে তা পরিচালকদের বসার জন্য, এবং গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সময় নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যানও উপস্থিত থাকেন।

কমার্স ব্যাংকের এই অস্থির পরিস্থিতি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপের বিষয়টি দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় জোরালো নজরদারি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার তৎপরতার প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।