
প্রতিবেদক: সরকার বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন খসড়া ‘বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ২০২৫’ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংককে প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হবে এবং এটি কেবল জাতীয় সংসদের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরের নিয়োগ ও অপসারণের জন্য সংসদের অনুমতি বাধ্যতামূলক করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা একটি স্বাধীন পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে হবে, যেখানে কোনো সরকারি কর্মকর্তা থাকবেন না। পরিচালনা পর্ষদে ব্যাংকিং ও অর্থনীতির বিশেষজ্ঞদের অন্তত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘অর্ডার ১৯৭২’ অনুসারে পরিচালিত হলেও নতুন অধ্যাদেশটি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আইন আকারে জারি করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে ব্যাংক তদারকি, বৈদেশিক মুদ্রা বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হবে। খসড়া প্রস্তুতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সাবেক কর্মকর্তা সাকের সিদ্দিকী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
নতুন অধ্যাদেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদমর্যাদা মন্ত্রীর সমান (চতুর্থ স্থান) হবে, যা বর্তমানে ১৪ নম্বর ক্যাটেগরির নিচে। গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের ক্ষেত্রে সংসদের অনুমতি বাধ্যতামূলক হবে এবং তাঁরা ছয় বছরের জন্য নিযুক্ত হবেন। অপসারণের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম থাকবে এবং তা প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ ও সংসদের অনুমোদন সাপেক্ষে হবে।
পরিচালনা পর্ষদে আট সদস্য থাকবেন, যাদের মেয়াদ সর্বোচ্চ তিন বছর এবং পুনর্নিয়োগ সম্ভব। পর্ষদ মুদ্রানীতি প্রণয়ন, আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা, ব্যাংক তদারকি ও কর্মী নিয়োগের দায়িত্ব পালন করবে। গভর্নর হলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং তাঁর নেতৃত্বে একটি নির্বাহী উপদেষ্টা কমিটি কাজ করবে, যেখানে সকল ডেপুটি গভর্নর ও সিনিয়র কর্মকর্তারা থাকবেন। কমিটির সিদ্ধান্তমূলক ক্ষমতা থাকবে গভর্নরের হাতে।
অর্থমন্ত্রী সভাপতিত্বে একটি ‘সমন্বয় পরিষদ’ গঠন করা হবে, যেখানে গভর্নর, বাণিজ্যমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রী সদস্য থাকবেন। এই পরিষদ অর্থনীতি ও মুদ্রানীতি সংক্রান্ত বিষয় সমন্বয়ে কাজ করবে এবং প্রতি তিন মাসে অন্তত একবার সভা করবে।
নতুন অর্ডারের অধীনে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক তদারকি, ঝুঁকি শনাক্তকরণ ও দ্রুত সংশোধনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণে বিশেষ ক্ষমতা পাবে। দুর্বল ব্যাংকের ক্ষেত্রে মূলধন পুনর্বিন্যাস ও প্রশাসনিক সংস্কারের মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া ব্যাংক রেজল্যুশন বিভাগের মাধ্যমে সংকট মোকাবেলা করা হবে।
সর্বোপরি, এই নতুন আইন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা ও দক্ষতা বাড়িয়ে দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।