
প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৮টি ব্যাংককে লভ্যাংশ দিতে নিষেধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থিক অবস্থার দুর্বলতা বিবেচনায় ২১ মে ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১’-এর ২২ ধারা অনুযায়ী এসব ব্যাংককে চিঠি দিয়ে লভ্যাংশ বিতরণ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর পরিচালক ও শীর্ষ নির্বাহীরা একাধিকবার অনুরোধ করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, প্রভিশন ঘাটতি পূরণের জন্য ডেফারেল সুবিধা গ্রহণকারী ব্যাংকগুলোকে লভ্যাংশ না দেওয়ার কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে এবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এসবিএসি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এই ১৮ ব্যাংকের অধিকাংশই প্রভিশন সংরক্ষণে ঘাটতির কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ২০২৩ সালের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক সময়সীমা বাড়িয়ে ৩১ মে করেছে। একইসঙ্গে, এসব ব্যাংককে এক মাসের মধ্যে বোর্ড অনুমোদিত বাস্তবসম্মত ও সময়বদ্ধ কর্মপরিকল্পনা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ আর্থিক বিবরণীতে ও পুঁজিবাজারের তথ্যে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। এ ছাড়া প্রভিশন রক্ষণাবেক্ষণ, লাভ-ক্ষতি ও মূলধন পর্যাপ্ততার ক্ষেত্রে যে কোনো অসঙ্গতি ধরা পড়লে ব্যাংক কোম্পানি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের ব্যাংক লভ্যাংশ দেওয়ার মতো আর্থিক অবস্থানে নেই।’ তিনি জানান, প্রভিশন ঘাটতির বাস্তবচিত্র প্রকাশে বাধ্য করা হলেও তা ব্যালান্স শিটে দেখানো হবে না। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঁচ বছর মেয়াদি ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার পরিকল্পনা জমা দেওয়া হবে।
২০২৪ সাল থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন নিয়ম চালু করেছে, যার আওতায় যেসব ব্যাংক ডেফারেল সুবিধা নেবে, তারা লভ্যাংশ দিতে পারবে না। আগামী বছর থেকে যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের বেশি হবে, তাদের ওপরও এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)-এর চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার বলেন, ‘লভ্যাংশ না দেওয়া হলে আমানতকারী, শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহকদের আস্থায় ঘাটতি তৈরি হবে।’ তিনি জানান, নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বোঝানোর চেষ্টা চলছে, কিন্তু তারা অনড় রয়েছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬ ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ১৬টি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পেরেছে। এর মধ্যে সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, যমুনা ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও মিডল্যান্ড ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
অন্যদিকে, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক লোকসান করায় লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারেনি। ওয়ান ব্যাংক মুনাফা করলেও লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শেষ সময়ে এসে ঢাকা ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পেয়েছে।
সুত্র:দ্যা ডেইলি ষ্টার