
প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নত করতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা প্রায় ১০০টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এই প্রস্তাবটি বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে পাঠিয়েছেন। এই পদক্ষেপটি যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা ঘোষিত ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় নেওয়া হয়েছে।
তবে, বাংলাদেশের শুল্কনীতি অনুসারে, কোনো নির্দিষ্ট দেশের জন্য আলাদা করে শুল্কহার নির্ধারণ করা হয় না। এইচ এস কোডের ভিত্তিতে পণ্যের শুল্কহার নির্ধারিত হয়, যা সব দেশের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। ফলে, যদি কোনো পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে তা সব দেশের জন্যই প্রযোজ্য হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ট্যারিফ লাইনে ৭,১৫৯টি পণ্য রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শুল্কহার নির্ধারিত আছে: ৬৫৯টি মূলধনি যন্ত্রপাতিতে ১ শতাংশ, ১,২১৬টি মৌলিক কাঁচামালে ৫ শতাংশ, ১,৫৫২টি মধ্যবর্তী কাঁচামালে ১০ শতাংশ, ১০৪টি সেমি প্রস্তুত পণ্যে ১৫ শতাংশ এবং ৩,২৫৫টি সম্পূর্ণ প্রস্তুত পণ্যে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপিত হয়। এছাড়া, কিছু পণ্যে সম্পূরক শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, ভ্যাট এবং অগ্রিম করসহ বিভিন্ন ধরনের কর আরোপিত হয়।
বর্তমানে খাদ্যপণ্যসহ অত্যাবশ্যকীয় ও জীবন রক্ষাকারী ৩২৯টি পণ্য আমদানিতে কোনো শুল্ক নেই। এই তালিকায় খাদ্যপণ্য, সার, গ্যাস, ওষুধ, শিল্পের কাঁচামাল এবং কৃষি উপকরণ অন্তর্ভুক্ত।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ২৯১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, যার মধ্যে ২৬২ কোটি ডলারের পণ্য অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য আনা হয়েছে। এই আমদানির মধ্যে ১৩৩ কোটি ডলারের পণ্যে কোনো শুল্ক-কর আরোপিত হয়নি, যেমন গম ও তুলা। গড়ে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যে ৬ শতাংশের কিছু বেশি শুল্ক আরোপিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত প্রধান পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে:
পুরোনো লোহার টুকরা (স্ক্র্যাপ): ৭৭.৮৬ কোটি ডলারের আমদানি, যা মোট আমদানির প্রায় ২৭ শতাংশ; গড়ে ৪ শতাংশ শুল্কহার।
বিউটেন (এলপিজির উপাদান): গড়ে ৫ শতাংশ শুল্কহার।
সয়াবিন বীজ: শুল্ক-কর নেই।
অন্যান্য পণ্য: তুলা, উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস, হুইস্কি, গাড়ি, গম, উড পাল্প, পুরোনো জাহাজ, সয়াকেক, কাঠবাদাম ইত্যাদি।
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকৃত পণ্যের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক, যা ২০২৪ সালে ৭০০ কোটি ডলারের বেশি রপ্তানি হয়েছে। এছাড়া, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, প্লাস্টিক এবং মনোহারি পণ্যও রপ্তানি করা হয়।
এই প্রস্তাবিত শুল্কমুক্ত সুবিধা বাস্তবায়িত হলে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর, চিকিৎসা সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য বিনা শুল্কে বাংলাদেশে আমদানি করা সম্ভব হবে, যা দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে।