
প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকরের ঘোষণা এলেও এখনো চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ চুক্তি হতে আরও দুই–তিন সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) চুক্তির খসড়া প্রস্তুত করছে। খসড়া তৈরির পর তা বাংলাদেশে পাঠানো হবে, যেখানে পর্যালোচনা শেষে মতামত দিয়ে ফেরত পাঠানো হবে যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে নির্ধারিত দিনে চুক্তি সই হবে।
চুক্তির পাশাপাশি একটি যৌথ বিবৃতির বিষয়েও আলোচনা চলছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছেন, ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্কে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। এর সফলতা নির্ভর করবে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সক্ষমতার ওপর। উল্লেখযোগ্যভাবে, পাল্টা শুল্ক কমাতে আলোচনা শুরুর আগেই গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট (এনডিএ) স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। যদিও এনডিএর কিছু বিষয় ফাঁস হয়ে যাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এতে দেশের স্বার্থবিরোধী কিছু ছিল না এবং আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ তা কাটিয়ে উঠেছে।
উপদেষ্টা আরও ব্যাখ্যা করেন, এনডিএ কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেও এমন গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিয়েছে, তাই আলোচনা গোপন রাখা বাধ্যতামূলক ছিল। তিনি সতর্ক করেন, যদি কোনো চুক্তিতে দেশের সক্ষমতা হ্রাস পায় কিংবা ক্ষুদ্র অর্থনীতিতে ক্ষতি হয়, তাহলে সেই চুক্তি টেকসই হবে না এবং তা পালনযোগ্যও নয়।
চুক্তি আলোচনার সময় যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানি থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার প্রসঙ্গও আসে। তবে বাণিজ্য উপদেষ্টা এটিকে গুরুত্বহীন বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যদি বিমান পরিচালনার সক্ষমতা না বাড়ে, তাহলে নতুন উড়োজাহাজ কেনা ফলপ্রসূ হবে না। বর্তমানে অতিরিক্ত এক কোটি যাত্রী পরিবহনের সুযোগ থাকলেও, পরিচালনায় দুর্বলতা থাকায় তার সদ্ব্যবহার হচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্র বরং বাংলাদেশের খাদ্য ও কৃষিপণ্য আমদানির দিকেই বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে। শেখ বশিরউদ্দীন জানান, বাংলাদেশ বছরে প্রায় ১৫০০–২০০০ কোটি ডলারের খাদ্যপণ্য আমদানি করে। আর যুক্তরাষ্ট্র কৃষিপণ্যের বড় উৎপাদক হওয়ায় এই খাতে সহযোগিতার সম্ভাবনা রয়েছে। একইসঙ্গে জ্বালানি ও কৃষিপণ্যের ভিত্তিতে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি প্রায় ৬০০ কোটি ডলার। তুলা, সয়াবিন, গম, ভুট্টা আমদানি বাড়িয়ে অন্তত ২০০ কোটি ডলারের ঘাটতি কমানোর লক্ষ্য রয়েছে।
বাণিজ্যচুক্তির খসড়া তৈরির কাজ চলমান এবং চলতি আগস্ট মাসের মধ্যেই চুক্তি স্বাক্ষরের আশা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে যে শর্তগুলো পাঠিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে: শুল্ক ও অশুল্ক বাধা, ডিজিটাল বাণিজ্য ও প্রযুক্তি, উৎসনির্ধারণ নীতিমালা, জাতীয় নিরাপত্তা, এবং চীন থেকে পণ্য আমদানি কমানো। যুক্তরাষ্ট্র তাদের পণ্য বাংলাদেশে অবাধ প্রবেশের নিশ্চয়তা চায়, পাশাপাশি তাদের মানসনদ মেনে নেওয়ার দাবিও করেছে।
এছাড়া, চীনের বদলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক ও বেসামরিক যন্ত্রাংশ, জ্বালানি, ভোজ্যতেল, এলএনজি এবং গম আমদানি বাড়ানোর প্রস্তাবও রয়েছে। এসব বিষয়ে চুক্তি হলে তা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকেও (ডব্লিউটিও) জানাতে হবে।
চুক্তির শর্ত ফাঁসের অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দ্বিতীয় সচিব মুকিতুল হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এনবিআর বলেছে, তিনি রাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁস করে চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। একইসঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্র চায় ইপিজেড শ্রমিকদের সংগঠন গঠনের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করা হোক এবং পোশাকশ্রমিক ও নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা হোক।