বাজারে আবারও চাল-তেলের দাপট, ক্রেতাদের দাবি সিন্ডিকেট ভাঙার

প্রতিবেদক: শীতকাল শেষ হতে না হতেই কিছু সবজির দাম সামান্য বেড়েছে, তবে এখনো বড় ধরনের অস্বস্তি নেই ক্রেতাদের মাঝে। কিন্তু চাল ও তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে একাধিকবার আলোচনার পরও বাজারে স্থিতিশীলতা আসেনি। ক্রেতাদের অভিযোগ, কর্পোরেট সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য না কমলে বাজার আরও অশান্ত হতে পারে। তাই জরুরি ভিত্তিতে সরকারের কড়া নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করছেন ভোক্তারা।

চাল ও তেলের বাজারে অস্থিরতা

চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ও কর্নেলহাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কেজিতে ২-৫ টাকা বেড়েছে।

মোটা চাল ৫৪ থেকে বেড়ে ৫৫ টাকা,পাইজাম চাল ৫৫ থেকে বেড়ে ৫৭ টাকা,বিআর-২৮ (মাঝারি চাল) ৬৪ থেকে বেড়ে ৬৫ টাকা ,চিকন চাল ৫ টাকা বেড়ে ৮৪ টাকা ,কাটারি ও নাজিরশাইল ৮৮ থেকে ৯১ টাকা হয়েছে ।

সরকারের কঠোর মনিটরিংয়ের পরও সয়াবিন তেলের দাম বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। বোতলে উল্লেখিত সর্বোচ্চ মূল্য থেকে ১০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

খোলা সয়াবিন তেল নির্ধারিত ১৬০ টাকা, তবে বাজারে মিলছে না।এক লিটার বোতল নির্ধারিত ১৭৫ টাকা, কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ১৮৫-১৯৫ টাকায়।দুই লিটার বোতল ৩৫২ টাকার পরিবর্তে ৩৬৫-৩৭০ টাকায় ।পাঁচ লিটারের বোতল ৮৮০-৯০০ টাকা, যা নির্ধারিত দামের চেয়ে ২৮-৪৮ টাকা বেশি

সবজি ও মাংসের বাজার

সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে, তবে তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে।বেগুন ৭০-৯০ টাকা,শসা ৫০-৬০ টাকা ,কাঁচা মরিচ ৪০-৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৩০-৪০ টাকা,টমেটো ৩০-৪০ টাকা,আলু ২৫-৩৫ টাকা,ঢেঁড়স ৫০-৬০ টাকা,করলা ৭০-৮০ টাকা,লেবু (প্রতি হালি) ৪০-৬০ টাকা ।

ব্রয়লার মুরগির দাম ১০-১৫ টাকা বেড়ে এখন ১৯০-১৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮০ টাকা। কক মুরগির দাম ২৮০ টাকা কেজি।

মাছের বাজারে দাম রুই (১ কেজি) ২৮০-৩০০ টাকা,পাবদা ৩৩০-৩৫০ টাকা,তেলাপিয়া ১৭০-২০০ টাকা,ছোট পাঙাশ ১৭০-১৮০ টাকা,বড় পাঙাশ ২০০-২২০ টাকা ।

অলংকার বাজারের ক্রেতা রিটন বলেন, “আমরা ব্যবসা করি, আমাদের দোকানে নিয়মিত অভিযান হয়। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানগুলোর তেমন নজরদারি নেই। বাজারের বড় ব্যবসায়ীরা মানুষকে জিম্মি করছে। প্রশাসন যদি কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে বাজার অশান্তই থাকবে।”

অন্য এক ক্রেতা অংকন বলেন, “সবজির দাম সহনীয় থাকলেও চাল ও তেলের বাজার যদি নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে বুঝতে হবে সরকার সিন্ডিকেট ভাঙার কোনো চেষ্টা করছে না। সিন্ডিকেট না ভাঙলে বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে না।”

উত্তর কাট্টলী এলাকার দোকানি উজ্জ্বল বলেন, “আমরা ছোট ব্যবসায়ী, আমাদের লাভ হয় ২-৫ টাকা। আমরা যদি কম দামে পাই, তাহলে কম দামে বিক্রি করব। কিন্তু বড় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিলে আমরা কিছুই করতে পারি না।”

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, “বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কড়া নির্দেশনা রয়েছে। আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি উৎপাদক পর্যায়েও নজরদারি বাড়ানো হবে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সাধারণ ভোক্তাদের কষ্ট আরও বাড়বে। তাই সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ ও কঠোর মনিটরিং জরুরি।