
প্রতিবেদক: বাজারে আলুর দাম কমতে কমতে প্রতি কেজি এখন ২০ টাকার নিচে নেমেছে। এক মাস আগে দাম ছিল ২৫ টাকা। এভাবে দাম কমায় চাষিরা বড় ধরনের লোকসানে পড়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের ঘোষিত পদক্ষেপ বাস্তবায়িত না হওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যেমন, কোল্ড স্টোরেজে আলুর ন্যূনতম দর কেজিতে ২২ টাকা ঠিক করা হয়েছিল, আর ৫০ হাজার টন আলু ক্রয়েরও ঘোষণা ছিল।
বাজারে সরবরাহ চাহিদার চেয়ে বেশি হওয়ায় দাম কমছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ও ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হয়েছে কেজিতে ১৮ থেকে ২৫ টাকায়। গত সপ্তাহে দাম ছিল ২০–২৫ টাকা, এক মাস আগে ২৫–৩০ টাকা। তবে, গত বছরের একই সময়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ৫০–৬০ টাকা। তুলনামূলকভাবে এবার দাম প্রায় ৬১ শতাংশ কমেছে।
পাইকারি বাজারেও আলুর দাম কমেছে। পাইকাররা জানান, বাজারে এখন আলু বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ১১–১২ টাকায়। ঢাকার কারওয়ান বাজারের পাইকার দেলোয়ার হোসেন বলেন,
‘বাজারে আলুর সরবরাহ চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি। তাই দাম কমছে। আমার এক ট্রাক আলু দরকার, কিন্তু দোকানের সামনে দুই ট্রাক অপেক্ষা করছে। এখন এক কেজি ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
অন্য পাইকার মোহাম্মদ সবুজ জানান, গত কয়েক দিন ধরে মুন্সিগঞ্জের আড়তদারদের কাছ থেকে ১১ টাকায় আলু কিনে গড়ে ১১ টাকা ৬৬ পয়সায় বিক্রি করছেন। অর্থাৎ ক্রয়মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সামান্য লাভেই বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে বগুড়া, রাজশাহী ও রংপুর থেকে ১২–১৫ টাকায় আলু কিনতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ গত মৌসুমে রেকর্ড ১ কোটি ১৫ লাখ টন আলু উৎপাদন করেছে। দেশে চাহিদা মাত্র ৯০ লাখ টন হওয়ায় বিপুল উদ্বৃত্ত হয়েছে। টিউবার ক্রপ রিসার্চ সেন্টার ও বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, উৎপাদিত আলুর বেশির ভাগ সরাসরি খাওয়া হয়। প্রায় ১০ লাখ টন আলু রাখা হয় বীজ হিসেবে, কিছু চিপস ও ক্র্যাকার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ৬২ হাজার টন আলু রপ্তানি হয়েছে।
মৌসুমের শুরুতে অনেক কৃষককে ১১ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করতে হয়েছে, যেখানে সরকারের হিসাবে গড়ে উৎপাদন খরচ ছিল কেজি ১৪ টাকা। উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের জন্য খরচ ছিল কেজি ২০ টাকা বা তার বেশি। মুন্সিগঞ্জের কৃষক আশরাফ সরকার বলেন,
‘গত মাসে আমি ৯ টাকা কেজি আলু বিক্রি করেছি, অথচ উৎপাদন খরচ ৩১ টাকা। এখন দাম আরও কমছে, তাই বিক্রি বন্ধ করেছি। কোল্ড স্টোরেজে এখনও ১২,৫০০ কেজি আলু মজুত আছে। গত মৌসুমে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ করেছি, বিক্রি হয়েছে মাত্র ৮০ হাজার টাকার আলু।’
কৃষকদের রক্ষায় সরকার ২৭ আগস্ট ঘোষণা দিয়েছিল ৫০ হাজার টন আলু কিনবে এবং কোল্ড স্টোরেজে ন্যূনতম বিক্রয়মূল্য ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোনো পদক্ষেপ কার্যকর হয়নি।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন,
‘এখনও প্রায় ১২ লাখ টন আলু কোল্ড স্টোরেজে পড়ে আছে। বিক্রির জন্য হাতে আছে সর্বোচ্চ আড়াই মাস। প্রতি কেজি আলুর দর এখন ১০–১১ টাকা, যা সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম। দাম ঠিক করলেও সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। কৃষকরা ভেবেছিল সরকার কিনবে, তাই আলু মজুত রেখেছিল। এখন সময় কম থাকায় সবাই বাজারে ছাড়ছে, ফলে দাম হু হু করে নামছে। সরবরাহ বেশি হলে দাম স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়।
এ বিষয়ে কৃষি সচিব মো. এমদাদ উল্লাহ মিয়াকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে টিসিবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ফয়সাল আজাদ জানিয়েছেন, সরকার এ মাসের শেষ থেকে আলু কেনা শুরু করবে।