বাজেটের পর বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত, এক মাসে বড় উত্থান পুঁজিবাজারে

প্রতিবেদক: তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের পুঁজিবাজার নিম্নমুখী অবস্থানে থাকলেও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার পর বাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী ধারা দেখা যাচ্ছে। বাজেটের পরদিন সূচক কিছুটা নিচে নামলেও এরপর থেকে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল (সোমবার) এক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় উত্থান দেখেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৯ দশমিক ৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৭৮৪ পয়েন্টে। লেনদেনও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে—৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ। আগের কার্যদিবসে যেখানে ২৬৩ কোটি ৩ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছিল, সেখানে গতকাল তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকায়।

অন্যান্য সূচকগুলোর মধ্যেও ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। ডিএস-৩০ সূচক ১৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৭৮৮ পয়েন্টে এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৫ পয়েন্টে। সূচকের এই উত্থানে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, ইউসিবি ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের শেয়ারের বড় অবদান ছিল।

ডিএসইতে এদিন মোট ৩৯৭টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩১৫টির, কমেছে ৩৬টির, এবং ৪৬টির দর অপরিবর্তিত ছিল।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে এনেছে। মধ্যপ্রাচ্যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীরা বাজারে ইতিবাচক মনোভাব ধরে রেখেছেন। তবে অনেক বিনিয়োগকারী এখনো বাজার পরিস্থিতি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।

খাতভিত্তিক লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইর মোট লেনদেনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৯ দশমিক ১ শতাংশ ছিল খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে। ব্যাংক খাত ১২ দশমিক ৯ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয়, ওষুধ ও রসায়ন খাত ১১ দশমিক ৬ শতাংশ নিয়ে তৃতীয় এবং বস্ত্র খাত ৮ দশমিক ৭ শতাংশ নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।

এদিকে দেশের অন্য পুঁজিবাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। সিএসইর প্রধান সূচক সিএসসিএএক্স ৩৮ দশমিক ২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৮৫ পয়েন্টে। সব শেয়ারের সূচক সিএএসপিআই ৬০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ২৪৫ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে ৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়, যা আগের দিনের ১০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার চেয়ে কিছুটা কম।

বাজারে এই আশাজাগানিয়া প্রবণতা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর একটি ইঙ্গিত হিসেবে বিবেচিত হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেকসই উন্নতির জন্য বাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা জরুরি।