বাজেটে ফ্ল্যাট-ভবনে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল

প্রতিবেদক: সরকার আগামী অর্থবছরের বাজেটে ফ্ল্যাট ও ভবনে বিনিয়োগ করে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় এই বিধান বাতিল করা হয়। এর আগে ২ জুন ঘোষিত বাজেটে আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট সংক্রান্ত কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছিল, তবে ফ্ল্যাট বা ভবন কেনার ক্ষেত্রে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছিল এবং করের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছিল। তখন রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে প্রতি বর্গফুটে ১০০ থেকে ২ হাজার টাকা করহার প্রস্তাব ছিল। ভবন নির্মাণেও এলাকাভেদে প্রতি বর্গফুটে ৫০ থেকে ৯০০ টাকা কর নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এখন এসব সুযোগ বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা অপ্রদর্শিত সম্পত্তি সাদা হয়েছে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে। যদিও ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের বাইরে পাচার করা টাকা ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, কেউ তা গ্রহণ করেননি। বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার পর অর্থ মন্ত্রণালয় শুল্ক ও কর সংক্রান্ত পরিবর্তনের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

নতুন বাজেটে আয়কর সংক্রান্ত কয়েকটি বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানিগুলোর জন্য করহার বাড়িয়ে সাড়ে ২২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, তবে ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে আয় প্রমাণ করলে করহার কমে ২০ শতাংশ হবে। অন্য সব পাবলিক কোম্পানির করহার সাড়ে ২৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, ডেন্টাল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক কলেজের করহার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ রাখা হয়েছে। সম্পত্তি হস্তান্তরে কর কর্তনের হারও ৮, ৬ ও ৪ শতাংশ থেকে যথাক্রমে ৫, ৩ ও ২ শতাংশে নামানো হয়েছে।

মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটেও বিভিন্ন ছাড় দেওয়া হয়েছে। রিফাইন্ড পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানিতে আগাম কর সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। ঝুট থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য তুলা উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। নারী উদ্যোক্তা পরিচালিত বিউটি পারলার ও বলপয়েন্ট কলম আমদানি করমুক্ত হয়েছে। হার্টের রিং ও চোখের লেন্স আমদানিতেও আগাম কর অব্যাহতি রয়েছে।

শুল্ক ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনায় সব ধরনের পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানিতে ট্যারিফ মূল্যের পরিবর্তে ইনভয়েস মূল্য ভিত্তিক শুল্ক ব্যবস্থা চালু করা হবে। এ জন্য ক্রুড পেট্রোলিয়ামের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশে নামানো হয়েছে। সৌরশক্তি উৎপাদনের যন্ত্রপাতি আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ১ শতাংশে এবং দেশের টায়ার শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যাচারাল রাবারের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে কমানো হয়েছে।