
প্রতিবেদক: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাস্তবধর্মী ও কার্যকর পরিকল্পনার অভাব রয়েছে বলে মনে করছে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি)। সংস্থাটি বলছে, বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ঠিক করা হলেও তা অর্জনের জন্য যে ধরনের উদ্যোগ দরকার, তা অনুপস্থিত।
মঙ্গলবার (৩ জুন) বাজেট-পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় আইবিএফবি আরও বলেছে, বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হলেও কার্যকর কর সংস্কার ছাড়া এই বিশাল লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়।
সংগঠনটি কালোটাকা সাদা করার প্রস্তাবেরও তীব্র সমালোচনা করেছে। আইবিএফবির মতে, এই সুযোগ দেওয়া সৎ করদাতাদের প্রতি অন্যায়, পাশাপাশি এতে দেশের আর্থিক শৃঙ্খলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আইবিএফবি বলেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে কাঠামোগত সংস্কারের ঘাটতি রয়েছে। কর প্রশাসনের সংস্কার, ঋণ টেকসইকরণ এবং সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনায় কোনো মৌলিক পরিবর্তনের ছাপ নেই। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ, উচ্চ সুদহার এবং অব্যবস্থাপনার বিষয়েও বাজেটে কোনো কার্যকর দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
সংগঠনটি আরো উল্লেখ করেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি খাতকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, রপ্তানিকারক ও স্টার্টআপদের জন্য নেই কার্যকর প্রণোদনা। একইসঙ্গে গবেষণা, কারিগরি প্রশিক্ষণ ও ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দও অনুপস্থিত। সামাজিক নিরাপত্তা খাতেও বরাদ্দ অপর্যাপ্ত।
আইবিএফবি রাজস্ব আদায়ে ডিজিটাল পদ্ধতির প্রসার এবং ন্যায্য করনীতি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ এবং স্বচ্ছ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
সংগঠনটি ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমানো, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং কম সুদে ঋণপ্রাপ্তির সুযোগ সহজ করার পরামর্শ দিয়েছে। তারা সামাজিক সুরক্ষা খাতের স্বচ্ছতা বাড়ানো, পুনরাবৃত্তি রোধ এবং প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছে সহায়তা পৌঁছানোর দাবি জানিয়েছে।
এছাড়া সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, ভর্তুকি যৌক্তিকীকরণ ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা বাড়ানোর বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেছে আইবিএফবি।
তবে বাজেটের কিছু ইতিবাচক দিকও তুলে ধরেছে সংস্থাটি। আইবিএফবি বলেছে, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধির ঘোষণাটি স্বস্তিদায়ক, বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করাকে সম্মানজনক সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এক হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল তৈরিকে নারী অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখেছে সংস্থাটি। এছাড়া কাঁচামাল ও ওষুধে শুল্ক হ্রাস, ই-বাইকে প্রণোদনা, ই-কমার্সে কর কাঠামো তৈরি এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) ৫ হাজার ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দকেও তারা সাধুবাদ জানিয়েছে।