
প্রতিবেদক: আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটকে ঘিরে সরকার বড় ধরনের পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে। বাজেট ঘাটতি কমাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ প্রায় ২৫ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। একইসঙ্গে, সামগ্রিক বাজেটের আকারও কমিয়ে আনা হবে। চলতি অর্থবছরে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা আগামী অর্থবছরে নেমে আসবে এক লাখ চার হাজার কোটি টাকায়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, বিদায়ী অর্থবছরের বাজেট ঘাটতিও কমে দাঁড়াতে পারে দুই লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকায়, যা আগের তুলনায় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা কম।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, সরকার ব্যাংক ঋণ কমিয়ে আনার মাধ্যমে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রাপ্তির সুযোগ বাড়াতে চায়। তিনি সতর্ক করে বলেন, সরকার যদি অধিকাংশ ঋণ ব্যাংক থেকে নিয়ে নেয়, তবে বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাবে। বর্তমানে ট্রেজারি বন্ড ও বিলের সুদহারও তুলনামূলক বেশি, যা ব্যাংকগুলোর জন্য সরকারকে ঋণ দেওয়া আকর্ষণীয় করে তুলছে—তবে এতে বেসরকারি খাতে অর্থ প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ এক সভায় জানান, সরকার এখন থেকে বাজেট বাস্তবায়নে ব্যাংক ঋণ বা টাকা ছাপানোর পথে হাঁটবে না। আগামী বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য এবং মেগা প্রকল্পে অতিরিক্ত ঋণ নির্ভরতা থাকবে না বলেও তিনি জানান।
অর্থনীতির বর্তমান চাপে সরকার খরচ নিয়ন্ত্রণের কৌশল গ্রহণ করেছে। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা গেছে। ফলে সংশোধিত বাজেটে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। বাস্তবে চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা। এর বিপরীতে, সরকার এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেয়নি, বরং পুরোনো ঋণ পরিশোধ করেছে ৫৯ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা—যা সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে ব্যতিক্রমধর্মী।
এই পরিস্থিতিকে ‘কোয়ান্টিটেটিভ টাইটেনিং’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ড. জাহিদ হোসেন। তার মতে, এটি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি বাস্তবায়নে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে।
অন্যদিকে, সঞ্চয়পত্র বিক্রির হার কম থাকায় এ খাত থেকেও ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমেছে। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৩৬ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকার, অথচ পরিশোধ করতে হয়েছে ৪৩ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। এর পেছনে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের সঞ্চয় সক্ষমতা কমে যাওয়াকেই কারণ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।
সরকার আগামী অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে চায়, যার মধ্যে সঞ্চয়পত্র ও ট্রেজারি বন্ড বিক্রি থেকে আসবে ২১ হাজার কোটি টাকা। বাকি অংশ আসবে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও অন্যান্য উৎস থেকে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ৭৫ হাজার ১৮ কোটি টাকা, এবং ট্রেজারি বিল ও বন্ড থেকে আরও ৩১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেছে।
ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, এই ঋণ প্রবণতা ভবিষ্যতে সেকেন্ডারি বন্ড মার্কেট চালু করতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।