
প্রতিবেদক: কোম্পানি আইনের সঙ্গে মিল না থাকার কারণে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার কিছু ধারাকে সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কোম্পানি আইনে পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ কত বছর হবে তা বলা থাকলেও নতুন বিধিমালায় তা উল্লেখ নেই। তবে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালায় পর্ষদের মেয়াদ দুই বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সভায় উপস্থিতি, শূন্য পদ পূরণ এবং চাঁদার পরিমাণ নির্ধারণসহ কিছু বিষয়ে ব্যবসায়ীরা আপত্তি তুলেছেন।
দুই বছর ধরে আলোচনার পর চার মাস আগে অন্তর্বর্তী সরকার এই বিধিমালা প্রণয়ন করলেও সংশ্লিষ্টরা এটি কোম্পানি আইনের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ও সাংঘর্ষিক মনে করছেন। বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) কাজের ধরনও ভিন্ন, অথচ বিধিমালায় সকলকে একইভাবে বিবেচনা করা হয়েছে।
মেট্রো চেম্বারের সভাপতি কামরান টি রহমান প্রথম আলোকে বলেন, “কোম্পানি আইন অনুসরণ করে আমরা যুগ যুগ ধরে চেম্বার পরিচালনা করে আসছি। এবারের বিধিমালা তার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। বিধিমালা মানলে কোম্পানি আইন লঙ্ঘন হবে। তাই সংশোধনের দাবি জানিয়েছি।”
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে। সচিবালয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক ডাকছে মন্ত্রণালয়। বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান জানান, “বিধিমালায় কিছু অসংগতিপূর্ণ ধারা রয়েছে। বৈঠকে উত্থাপিত সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে বিধিমালা সংশোধন করা হবে।”
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি) লিখিতভাবে বিধিমালা সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন। এর আগে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে বিভিন্ন পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হলেও অংশীজনদের চাওয়া বিষয় ছাড়াও বিধিমালায় কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বাণিজ্য সংগঠনগুলো কোম্পানি আইনের ২৮ ধারায় নিবন্ধিত। বিধিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোম্পানি আইন পুরোপুরি বিবেচনায় নেয়া হয়নি। ফেডারেশনের নির্বাচন প্রক্রিয়া ও অন্যান্য চেম্বার বা অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন প্রক্রিয়া একই করার নির্দেশনা দেওয়াও বিষয়টিকে আরও জটিল করেছে।
পর্ষদের মেয়াদ, সভায় উপস্থিতি, শূন্য পদ পূরণ এবং চাঁদার হার নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিধিমালায় পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ ২৪ মাস নির্ধারণ করা হয়েছে, অথচ শতবর্ষী এমসিসিআইয়ে এটি তিন বছর। সভায় উপস্থিতি নিয়েও বাধ্যতামূলক ধারা বাস্তবায়ন করা কঠিন। শূন্য পদ পূরণের ক্ষেত্রে কোম্পানি আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রথা রয়েছে, যা নতুন বিধিমালায় অসঙ্গতিপূর্ণ। এছাড়া চাঁদার পরিমাণ সরকার নির্ধারণের বিধানও ব্যবসায়ীরা বাতিলের সুপারিশ করেছেন।
বিএপিএলসির সভাপতি রূপালী চৌধুরী বলেছেন, “সরকার বুঝে বা না-বুঝে বিধিমালা করেছে। অসংগতিগুলো লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। আশা করি শিগগিরই সংশোধনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”