বাস্তবমুখী বাজেট, নয় লোক দেখানো প্রতিশ্রুতি—জোর দেওয়া হচ্ছে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে

প্রতিবেদক: আগামী ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম এই বাজেট নিয়ে সম্প্রতি দৈনিক সমকালের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বাজেটের মূল দর্শন, করনীতি, বিনিয়োগ পরিবেশ, আইএমএফের সহায়তা, এবং কাঠামোগত সংস্কারের নানা দিক তুলে ধরেন।

ড. সালেহউদ্দিন জানান, এবারের বাজেট গতানুগতিক হবে না। বাস্তবায়নযোগ্য ও সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হবে। বাজেটের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, যা বর্তমানে প্রায় ৯ শতাংশ। ডিসেম্বরের মধ্যে তা ৭.৫–৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, আইএমএফের সহায়তা না পেলে বাজেট দেওয়া কঠিন হতো, কারণ অন্যান্য দাতা সংস্থাগুলোর সহায়তাও তখন অনিশ্চিত হয়ে পড়ত। পাশাপাশি কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে কর আদায়ে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে। কর ফাঁকি ও দুর্নীতি বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে এবং অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার কোনো সুযোগ বাজেটে থাকছে না।

বিনিয়োগ প্রসারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘অলিগার্কি’ অর্থনীতি নয়, বরং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করাই হবে লক্ষ্য। এসএমই ডেটাবেইজ গঠন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিল বৃদ্ধির কথাও জানান তিনি।

বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে জ্বালানি ও কৃষি খাতে কোনো আপস করা হবে না বলে জানান ড. সালেহউদ্দিন। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে ‘সিস্টেম লস’ কমিয়ে ভর্তুকি হ্রাস করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ব্যাংক খাতে সংস্কারের অংশ হিসেবে ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ’ চালু করা হয়েছে। দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ বা অবসায়নের পাশাপাশি আমানতকারীদের অর্থ রক্ষায় আলাদা তহবিল গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। ছোট আমানতের টাকা দ্রুত পরিশোধ ও বড় আমানতের ক্ষেত্রে শেয়ার বা বন্ডের ‘অপশন’ দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে প্রকল্পনির্ভরতা থেকে সরিয়ে পরিচালন বাজেট বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মৌলিক খরচ পরিচালন বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষকদের পাওনা পরিশোধসহ বিভিন্ন বকেয়া সমস্যা ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে।

সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ ও ভাতা কিছুটা বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। কর কাঠামোয় ভারসাম্য এনে সব উদ্যোক্তার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। মুষ্টিমেয় প্রতিষ্ঠানের জন্য বাড়তি সুবিধা বন্ধ করে প্রতিযোগিতার ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার করেন অর্থ উপদেষ্টা।

এই বাজেট হবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক অথচ দিকনির্দেশনামূলক দলিল, যেখানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন, কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে বাস্তবমুখী উদ্যোগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।