বাস আমদানিতে শুল্ক কমছে, আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার পথে সরকার

প্রতিবেদক: দেশের বড় বড় শহরে কার্যকর গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ১৬-৪০ আসনের যাত্রীবাহী বাস আমদানিতে শুল্ক হ্রাসের পরিকল্পনা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ ধরনের বাস আমদানিতে বিদ্যমান ১০ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব বিবেচনায় রয়েছে। এর উদ্দেশ্য, নগর যাতায়াতে আধুনিকতা আনা ও যাত্রীসেবার মান উন্নয়ন।

বর্তমানে বাস আমদানিতে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ও ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতে হয়। আমদানিকারকদের দাবি, এসব করের কারণে উন্নত প্রযুক্তির বিশেষ করে জাপানি বাস আনতে খরচ অনেক বেড়ে যায়, যা পরিবহন খাতের আধুনিকীকরণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।

বাংলাদেশ রিকন্ডিশনড ভেহিকলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল হক বলেন, “শুল্ক কমানোর প্রস্তাব সময়োপযোগী ও যৌক্তিক। বর্তমানে অনেক বাস ফিটনেসবিহীন, এতে যাত্রী নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।” তিনি আরও বলেন, “নতুন ও উন্নতমানের বাস আমদানির পথ খুলে গেলে নগরবাসীর জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক ও নির্ভরযোগ্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”

মোহাম্মদ রহমত নামে মিরপুরের এক বাসিন্দা, যিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, জানান— “প্রতিদিন গণপরিবহনেই অফিস যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু বাসের বেহাল অবস্থা ও বিশৃঙ্খল পরিবহন ব্যবস্থায় ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বয়স্কদের যাতায়াত আরও কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।”

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে চলাচলকারী বেসরকারি বাসের প্রতি পাঁচটির একটির বৈধ ফিটনেস নেই। ঢাকায় ৭৫টি প্রতিষ্ঠানের অধীনে ৩,৯৭৪টি বাসের মধ্যে ৮৭১টির কোনো বৈধ ফিটনেস সনদ নেই, যা মোট বাসের প্রায় ২২ শতাংশ।

অন্যদিকে পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমানে ঢাকায় ১২০টির বেশি বাস অপারেটর প্রায় ৫,০০০ বাস পরিচালনা করছে, যাদের অনেকেরই রুট পারমিট নেই। তারা ঘুষ দিয়ে রাস্তায় চলাচল করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’-এর ২৫ ধারায় বলা আছে— ফিটনেসবিহীন বাস রাস্তায় চালালে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। কিন্তু আইন থাকলেও এর বাস্তব প্রয়োগ যথাযথ হচ্ছে না।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত দেশে ৩২,৭৩৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৫,৩৮৪ জন নিহত এবং ৫৩,১৯৬ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১,৯১৫ জন ছিলেন বাসযাত্রী।

২০১৯ সালে সরকার রুট পারমিট ও অপারেটর সংখ্যা যৌক্তিক করতে একটি কমিটি করে। যদিও ৪২টি রুট চালুর পরিকল্পনা থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৩টি রুটে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুল্ক হ্রাসের এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে তা হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি শুধু যাত্রীসেবার মান বাড়াবে না, বরং দুর্ঘটনা, পরিবেশ দূষণ ও নৈরাজ্য ঠেকাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।