বিএইচবিএফসির ঋণচাহিদা বেড়েছে, তহবিল সংকটে বিতরণে বাধা

প্রতিবেদক: বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি) দেশে আবাসন খাতে ঋণদানকারী একমাত্র রাষ্ট্রীয় বিশেষায়িত সংস্থা। ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় কম সুদের কারণে গৃহঋণগ্রহীতাদের কাছে এর চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। তবে তহবিল সংকটে সংস্থাটি পর্যাপ্ত পরিমাণে ঋণ দিতে পারছে না—সরকারি কর্মচারী ও বেসরকারি খাত, উভয় ক্ষেত্রেই।

এই পরিস্থিতিতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে বিএইচবিএফসি সরকারের কাছে ৩ শতাংশ সুদে ২০ বছর মেয়াদে এক হাজার কোটি টাকার ঋণসহায়তা চেয়েছে। ২৬ জুনের পরিচালনা পর্ষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় এবং ২৪ জুলাই সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুল মান্নান অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠান।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক জানিয়েছেন, চিঠি পাওয়া গেছে এবং বিষয়টি নিয়ে অর্থ বিভাগের মতামত চাওয়া হয়েছে।

সাত দশকের বেশি সময় ধরে সুপরিকল্পিত আবাসন বিনির্মাণে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীকে ঋণ দিচ্ছে বিএইচবিএফসি। বর্তমানে ৭৩টি শাখার মাধ্যমে উপজেলা ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রোথ সেন্টার পর্যন্ত সেবা পৌঁছেছে।

তহবিলসংকটের প্রমাণ হিসেবে সংস্থাটি জানিয়েছে—২০২২-২৩ অর্থবছর: ঋণ মঞ্জুর ৮৪৬ কোটি, বিতরণ ৬৯৬ কোটি টাকা।২০২৩-২৪ অর্থবছর: ঋণ মঞ্জুর ১,২৮৯ কোটি, বিতরণ ৯১৬ কোটি টাকা।২০২৪-২৫ অর্থবছর (বিদায়ী): ঋণ মঞ্জুর ১,৩৩৪ কোটি, বিতরণ ৯২২ কোটি টাকা

শুধু গত অর্থবছরেই ৪১২ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ সম্ভব হয়নি তহবিলের অভাবে।

বর্তমানে সংস্থার মোট তহবিল ৪,৪৫০ কোটি টাকা, যার মধ্যে স্থিতি ২,৭০৬ কোটি টাকা। প্রধান উৎসগুলো হলো—ঋণপত্র বিক্রি (১,৮৭২ কোটি), ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তা (১,৬২৮ কোটি), সরকারি ঋণ (৮২২.৫ কোটি) ও অন্যান্য আমানত। কোনো ঋণ কিস্তি বকেয়া নেই এবং খেলাপি ঋণের হার ৩.৪৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

তীব্র তহবিল সংকট থাকা সত্ত্বেও সংস্থাটি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারকে ৮৩ কোটি এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫০ কোটি টাকার লভ্যাংশ দিয়েছে। এ কারণে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও চাপে পড়েছে। অনেক ঋণ আবেদন মঞ্জুর হলেও দীর্ঘদিন চেক দেওয়া সম্ভব হয়নি, যা গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।

এমডি মো. আবদুল মান্নান আশা প্রকাশ করেছেন, সরকারের কাছে চাওয়া এক হাজার কোটি টাকার সহায়তা ইতিবাচকভাবে বিবেচিত হবে।